Shares 2
Honda XBlade 160 1500 কিলোমিটার রাইডিং রিভিউ - রোমেল খান
Last updated on 16-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
আমি রোমেল খান । থাকি ঢাকার গুলশানে । আজ আমি আমার Honda XBlade 160 বাইকটির ব্যাপারে কিছু কথা শেয়ার করবো । বাইকটি বর্তমানে ১৫০০ কিলোমিটার রাইড করেছি ।
Honda XBlade 160 1500 কিলোমিটার রাইডিং রিভিউ
অনেক ছোট বেলায় বাসাইকেল কেনার স্বপ্ন ছিল । তখন আমি ক্লাস ৬-৭ এ পরি । তখন আসলে আমার সে স্বপ্নটা পূর্ন হয়নি । তবে সাইকেল চালিয়েছি অনেক । বড় ভাইদের থেকে নিয়ে বা ভাড়া নিয়ে কত বার যে সাইকেল নিয়ে দিক-বিদিক ঘুড়ে বেড়িয়েছি তার সীমা পরিসীমা নেই । এক সময় হাই স্কুল শেষ করে কলেজে উঠি । তখন থেকে বাইকের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় । আর মনে মনে ভাবতাম কবে বড় হব । টাকা ইনকাম করব । আর নিজে একটা বাইক কিনব ।
স্বপ্নটা অনেকদিন ধরে পুষে রাখা ছাড়া আমার কোন বিকল্প ছিলনা সে সময় । কারন আমাদের মধ্যবিত্ত্য পরিবারের সব স্বপ্ন সাথেসাথে পুরণ হয়না । এক সময় কলেজ শেষ করে ইউনির্ভাসিটিতে উঠলাম। অনার্স শেষ করলাম । তারপর চাকুরিতে ঢুকলাম । ফাইনালি টাকা জমিয়ে কিনে ফেললাম আমার স্বপ্নের বাইক । আমার প্রথম কেনা বাইকটি ছিল আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় Bajaj Pulsar 150cc । পালসার বাইকটি আমি ব্যবহার করেছি প্রায় ৪ বছর ২৭ হাজার কিলোমিটার , এরপর ওটা আমার ছোট ভাইকে দিয়ে দিয়েছি ।
২ তিন মাস ধরে অপেক্ষা করে কিনলাম আমার অনেক পছন্দের Honda X Blade 160 । অনেকদিন ধরে Honda XBlade এই বাইকটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম । অনেক রিভিও দেখেছি ইউটিউবে । Honda XBlade বাইকটি আমি ব্যবহার করেছি প্রায় ৩ মাসে ১৫০০ কি.মি । যার মধ্যে সিটি রাইড বেশি । হাইওয়ে রাইড ও আছে । সেই অভিজ্ঞতা আজ আমি এই আপনাদের তুলে ধরবো ।
Honda XBlade 160 বাইকটি গত জানুয়ারির প্রথমদিকে কিনি । ডিসেম্বর মাসেই এক্স ব্লেড বাংলাদেশে লঞ্চ করে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড। কেনার আগে কোন ধরনের টেস্ট রাইড করা হয়নি Honda XBlade । সত্যি বলতে হোন্ডার উপর এক ধরনের আস্থা ছিল আগে থেকেই । আর এক্স ব্লেইডের উপর ক্রাশ সেই ইন্ডিয়াতে লঞ্চ হওয়ার পর থেকেই । প্রথম যেদিন ঢাকার শোরুমে বাইকটি দেখতে গেলাম ভালো লাগে যায়, কিন্ত সামনের চাকা চিকন দেখে একটু মন খারাপ হয়েছিলো। তারপরও অনেক পছন্দের বাইক আর আমার হাতে সে সময় কোন বাইকও ছিলোনা তাই কিনে ফেলি Honda XBlade । যেদিন কিনতে যা্ই সেদিন অফিস শেষ করে রাত নয়টার দিকে যাই বারিধার হোন্ডার শোরুম “হোন্ডা লাইফ” এ । আগে থেকেই ফোনে অবশ্য যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম। তারপরও কালার বাছাই করতে গিয়ে দেখি সবগুলোকেই কমবেশী ভালো লাগে ।
কালো রং এর প্রতি আলাদা আকর্ষণ ছিলো যাকে ফেসিনেশনের পর্যায়ে ফেলা যায়। অন্য কালার গুলো ভালো লাগলেও ভেবে চিন্তে কালো রংটাই বেছে নিলাম। আমার আগের বাইকটি ছিল নীল পালসার । তাই পছন্দের কালারের বাইক চালানোর সুযোগটি আর মিস করতে চাইলাম না। ডেলিভারীর আগের ফাইনাল চেকিং ছোট খাটো এক্সেসোরিজ ফিটিং আর অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে সারতে “হোন্ডা লাইফ” বন্ধের সময় পেরিয়ে গেলেও প্রায় রাত এগারোটার দিকে আমাকে বাইকটি বুঝিয়ে দেয়। উত্তেজনায় শোরুম থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমি কোন আরামদায়ক কোন একটি বাহনে বসে আছি। যার কোন ভাইব্রেশন বা যার্ক নেই বাতাসে ভাসতে ভাসতে পথের ট্রাফিক জ্যাম , গাড়ীর হর্ন রিকশার চাপ কোন কিছুকেই কিছুই মনে হচ্ছিলো না । কখন যে বাসায় পৌছে গেলাম টের পাইনি। সমস্যা হলো রাতে, এক্সাইটমেটের কারনে ঠিকমত ঘুম হচ্ছিলো না। কখন সকাল হবে কখন অফিসে যাবো। মিডিয়ায় চাকরির কারনে বেশীরভাগ কলিগই বাইকার। তখনও আমার অফিসের কোন কলিগ Honda XBlade কেনেনি আমিই প্রথম ।
Honda X Blade In Bangladesh - Honda X Blade First Impression
এপাশ ওপাশ করে রাত পেরোলো সেদিন। পর দিন বিকাল শিফটের ডিউটি হওয়ায় বাসায় দিন কাটছিলো না। একটু আগেই অফিসে গেলোম। আমাদের অফিসের পার্কিংটা গাছের ছায়ায় এবং অঘোষিত স্মোকিং জোন। তাই পার্কিং এ সবসময় কেউ না কেউ থাকে । নতুন হেলমেট নতুন বাইক তাও আবার Honda X Blade 160। তাই দু একজন কলিগ ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো কেউ আবার একে অন্যের দিকে তাকালো। বেশ মজা পাচ্ছিলাম ।
ইচ্ছে কারেই হেলমেট দেরিতে খুললাম। দুজন কলিগ এক গাল হেঁসে স্বাগত জানালো । বাইকটির নতুনত্ব সবাই একবাক্যে মেনে নিলো। বিশেষ করে নজর কাড়ে এটার ট্রান্সফরমার অপটিমাস প্রাইম লুক হেডলাইট। কেউ পেছন থেকে দেখার মত সাইলেন্সারটা দারুন, দুটি একনলা বন্দুক যেনো উকি দিয়ে আছে। কেউ বলেছে এরো শ্যাইপ এর ব্যাকলাইটটা দারুন ভিন্ন রকম। তবে কেউ কেউ এর ফুয়েল ট্যাংক কিট, রিয়ার মাডগার্ড, রিয়ার ইন্ডিকেটর আর সামনের চাকা চিকন বলে সমালোচনা করতে ছাড় দেয়নি। দু একজন টেস্ট রাইড দিয়ে এক বাক্যে বলেছে “This is Awesome” ।
Honda XBlade 160 - ভ্রমন
প্রতিদিনই অফিস বাসা যাতায়াত যেনো উপভোগ্য একটি সময় অপেক্ষা করছিলাম কবে বাড়ী যাবো । চলতি সপ্তাহে ছুটি ম্যানেজ না হওয়ায় পরের সপ্তাহে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ততদিনে দশটি সূর্যোদয় সূর্যাস্ত দেখতে হয়েছে XBlade কে নিয়ে । পিলিওন ছা্ড়াই একা বেড়িয়ে পড়লাম। রওনা হতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল সেদিন। এর আগেও কয়েকবার বাইক নিয়ে গিয়েছি বাড়িতে । যাই হোক, গুলশান থেকে প্রধান সড়ক প্রগতী স্মরনীতে আসতে যাতটুকু দেরি এর পর অন্য দিনের মত গুলশানের উল্টো দিকে বাড়ীর পথ ধরলাম। জয়দেবপুর পর্যন্ত পৌছাতে প্রায় দু ঘন্টা সময় লেগে যায়।
যেহেতু নতুন বাইক, তাই আস্তে ধীরে যত্ন নিয়ে চালাচ্ছিলাম। জয়দেবপুর পৌছে রাস্তার পাসে পার্ক করে চা পানের পর আবার চেপে বসলাম। ঢাকা টু ময়নসিংহ রোড, যারা এ রাস্তায় রাইড করেছেন , শুধু তারাই জানেন এ রাস্তার মর্ম। হাইওয়েতে বাসের সাথে তালমিলিয়ে ৭৫-৯০ কিমি গতিতে চালানোর সময় বিন্দুমাত্র ব্যালেন্স বা ভাইব্রেশন সমস্যা ফিল হয় নাই । সময়মত ইজিলি ওভারটেক করতে পেরেছি। এক্স ব্লেড আমার কাছে যথেষ্ট কমফোর্টেবল লেগেছে। তেল নিয়েও টেনশন নেই। আর কোন যাত্রাবিরতি না দিয়ে এক টানে মোটামুটি ১ ঘন্টায় পথ পাড়ি দিয়ে ময়নসিংহ পৌছাই। আবার যাত্রাবিরতী নিলাম, চা পানের পর আবার নিজ জেলা নেত্রোকানা সদরের উদ্দেশ্যে চলা শুরু করলাম। ৩০ মিনিট রাইড করে বাড়ী নেত্রকোন পৌছালাম। নিজ জেলায় পৌছে একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম। যেমনটা আমার সব সময় হয়।
বাড়ী থাকার সময় বন্ধুদের আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো বাইকের লুক, সাউন্ড, হেডলাইট, এ্যারো ব্যাকলাইট, বাইডিফল্ট হেজার্ড/এমার্জেন্সি লাইট, এবং গিয়ার নাম্বার ডিসপ্লে। নতুন বাইক নতুন ফিল নিয়ে তিনদিন কাটালো। এবার আবার ঢাকায় ফেরার পালা। সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ তারপর বিরতীহিন দু ঘন্টা রাইড করে, বেলা ১১টার সময় অফিসে ঢুকলাম। বলে রাখা জরুরি, এই একটানা যাত্রার করেও কোমর বা কাঁধে কোন পেইন অনুভুত হয়নি। বাইকটি প্রথমে ৩০০ কিমি চালানেরা পর হোন্ডা থেকে লুব্রিকেন্ট চেন্জকরি। তখন কিছু কিছু সময় পাওয়ার লস পেয়েছি।
আর সার্ভিসিং করাই কেনার ঠিক ১ মাস পর। তখনও অবশ্য আমার 1000 কিলোমিটার হয়নি। 700 কিলোমিটারের মত হবে। প্রথম ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২ বার হোন্ডার নিজস্ব ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। এখন পর্যন্ত কোন মডিফাই করিনি। চাকার প্রেশার সঠিক রাখি। চেইন পরিষ্কার রখার চেষ্টা করি । Honda Xblade 160 পারফরম্যান্স ভাল মনে হয়েছে। ব্রেকিং সিস্টেমও খারাপ না। এর পর সময় এলো যে কারনে ১৬০ সিসি। উচ্চ মাইলেজের Honda XBlade কেনা তা পরখ করে দেখার মাহেন্দ্রক্ষন। এখন পর্যন্ত মোট ১৫০০ কিমি রাইড করেছি। মাইলেজের ব্যাপারে বলতে গেলে হোন্ডা থেকে মাইলেজ চেক করেছি দুবার সিটিতে ৪০ কিলোমিটার আর লং ড্রাইভে ৪৭ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর মত মাইলেজ পেয়েছি।
ভালো দিক গুলোঃ
- লুকস এবং ডিজাইন অসাধারন
- সিটিং পজিশন আরামদায়ক
- ব্রেকিং সিস্টেমও ভাল লেগেছে
- বাইকে ভাইব্রেশন ফিল হয়নি
- পেছনের টায়ার সাইজ
- ব্যালেন্সিং ভাল
- স্মুথনেস রানিং
- সার্ভিস
খারাপ দিক গুলোঃ
- হেডলাইটের আলো অনেক কম
- বডি কোয়ালিটি সন্তুসজনক না
- গিয়ার শিফটিং এ একটু শব্দ হয়
- এবিএস দেওয়া উচিৎ ছিল
- ডাবল ডিস্ক দরকার ছিল
- সামনের চাকা আরও মোটা হওয়া উচিত ছিল
সর্বোপরি বলতে গেলে আমাদের দেশের বর্তমান 160cc সিরিজের বাইকের মধ্যে Honda Xblade 160 আমার কাছে খুব ভাল মনে হয়েছে। যত্নসহকারে রাইড করলে ও ঠিক সময়ে ইঞ্জিন ওয়েল চেন্জ সহ মেন্টেইনেন্স করলে ভাল পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ রোমেল খান আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Ashik Mahmud Bangla