Shares 2

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - রৌদ্র

Last updated on 29-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি রৌদ্র, ঢাকার মিরপুরে থাকি। আজকে আপনাদের আমার ব্যবহার করা Honda Livo 110 বাইকের ব্যপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

শুরুটা ২০১৮ সালে , কিন্তু প্রক্রিয়াটা আরো আগের। আমি মূলত পড়াশুনার পাশাপাশি ইভেন্ট এ ফ্রিল্যান্সিং করি। আর এই ইভেন্ট এর ৯০% অফিস গুলশান, বনানী বা এই এরিয়াতে। মিরপুর থেকে অনেক দূর ।

সকালে বাস পাওয়া খুব কঠিন যেহেতু অফিস টাইম। বিকাল ৫ টা থেকে আবার শুরু হয় বাসের জন্য হাহাকার। মিরপুর থেকে সন্ধ্যা ০৭ টার পর গুলশান/বনানী এর কোন বাস নেই। আবার গুলশান/বনানী থেকে রাতে খুব ই সীমিত বাস পাওয়া যায় আর সাথে ভিড় তো আছেই। কাজেই আমার কাজ কর্ম করতে খুব সমস্যা হচ্ছিলো। নিজের একটা বাইক থাকলে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যেত। 

সেই চিন্তা থেকে,  ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি চিন্তা করলাম আমার একটা বাইক ক্রয় করতে হবে। বাসায় বললাম, কিন্তু বাসা থেকে কোনো মতেই আমাকে বাইক দিবেই না, তাতে যা হয়ে যাক।


Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

আমি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে টার্গেট নিলাম আগামী ২০১৯ এর ডিসেম্বর এ আমি নিজের টাকায় বাইক কিনব। অনলি ১২ মাস টার্গেট। ইভেন্ট করে খুব ইনকাম হয় তা না,  তবে যে গোল সেট করতে পারে বা যার ইচ্ছা আছে তার একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়। টাকা জমানো শুরু করলাম, যা ইনকাম হতো তার বেশির ভাগই জমাতে লাগলাম।

টার্গেট নিলাম Honda Livo 110 এর ডিস্ক ব্রেক বাইকটি কিনবো। সেপ্টেম্বর মাসেই আমার জমানো টাকা বাইকের দামের প্রায় কাছাকাছি হয়ে গেলো। এর মধ্যে বাইকটিরও ডিস্কাউন্ট অফার চলে আসলো। তাই আর দেরি করলাম না, বাইক বুকিং দিয়ে রাখলাম।

Click To See Honda Livo 110 First Impression Review In Bangla – Team BikeBD

যেটুকু ঘাটতি ছিলো বন্ধুদের থেকে ম্যানেজ করলাম। আমার বাসায় তখনো কেউ কিছু জানে না যে আমি কি করছি। আমি আগেই বাইকের টাকা জমা দিলাম, যা যা আনুসংগিক ডকুমেন্টস লাগে সব ডকুমেন্টস জমা দিলাম। আগে থেকেই একটা নাটক সাজালাম। 

আমি ইভেন্ট এর অফিসেই ছিলাম। বাসায় কল দিলাম বাবাকে বললাম একটা গিফট পাচ্ছি। তুমি কাকার গাড়ি নিয়ে মিরপুর ১ আসো। আব্বু মিরপুর ১ নং এ আসলো। আমি গুলশান থেকে মিরপুর ১ এ আসলাম। সেখান থেকে নিয়ে আব্বু আর কাকা কে নিয়ে গেলাম মোহাম্মদপুর হোন্ডার শোরুম বাইক ভ্যালি তে।

তখনো বাবা বা কাকা কেউ কিছু বুঝলো না যে কি হতে যাচ্ছে। শোরুমে ঢুকার পর তারা বেশ অবাক হলো, যে আমি বুঝি তাদেরকে চাপ দিয়ে বাইক কিনে নিচ্ছি। কিন্তু আমার তখন অন্য রকম মজা হচ্ছিলো তাদের চেহারা দেখে। আমি তাদের সামনে কোনো লেনদেন করলাম না, যেহেতু টাকা আগেই দেয়া পেমেন্ট করা ছিল। 

তখন আমি বাবা আর কাকা কে বিষয়টা ভেঙ্গে বললাম যে, একটা প্রোগ্রামে এটেন্ড করে তার পুরষ্কার হিসেবে বাইকটি পেয়েছি। আর তারাও সেটা বিশ্বাস করলো তখন।

এই বাইকটি আমি যে নিজের টাকায় কিনেছি তা আজও ফ্যামিলির কেউ জানে না। আমার অবশ্য বেশ ভাল লাগে এইটা ভেবে যে, নিজের টাকায় কিনে বাইক চালাই। আচ্ছা গল্প অনেক হলো, এখন আমার Honda Livo 110 বাইকটির ব্যাপারে কিছু বলি। ২০১৯ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর Honda Livo 110 ডিস্ক বাইকটি কিনি। 

এখন ২০২০ এর ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত বাইকটি ৯০০০+ কিলোমিটার চালিয়েছি । এটাই আমার জীবনের প্রথম বাইক। বাইক কেনার আগে এই বাইকটি কেনার স্বপ্ন ছিলো আমার। কারণ বাইকটির কালার,  লুক সবকিছু আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছে। আমার হাইট যেহেতু ৫'১১", তাই একটি উঁচু বাইকের প্রয়োজন ছিলো। Honda Livo 110 বাইকটি তাই প্রথম পছন্দ ছিল এবং এটার দাম আমার সাধ্যের মধ্যে ছিল। তখন Honda Livo 110 বাইকের বাজার মূল্য ছিলো ১,১৬,০০০ টাকা।

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

আমি তখনো বাইক চালানো শিখিনি। আমার ইচ্ছা ছিল নিজের বাইক দিয়েই বাইক চালানো শিখবো। তাই বাইক কেনার দিন আমার এক বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলাম বাইকটি চালিয়ে নিয়ে আমার বাসা পর্যন্ত আসার জন্য। মানে আমার বাইকের ১ম রাইড আমার বন্ধু দিয়েছে। 

Honda Livo বাইকটি কেনার পর দিন থেকে শুরু হলো আমার বাইক চালানোর প্রশিক্ষণ। সকাল ৬টা বা ৭ টায় আমার বাসার কিছুটা সামনে খালি মাঠে গেলাম। মোটামুটি ট্রাই করে ওইদিন একটা ধারণা নিলাম। পরদিন বাবা নিজেই নিয়ে গেলো বাইক চালানো শিখাতে। ভালোই চালাচ্ছিলাম, ২য় দিনেই মোটামুটি চালানো শিখে গেলাম এবং পুরো এলাকা চক্কর মারলাম আমার Honda Livo 110 বাইকটি নিয়ে।

কিছু দিনের মধ্যে ভালোভাবে চালানো শিখে গেলাম। বাইকের কাগজ পত্র করতে দিলাম, খুব দ্রুত পেয়েও গেলাম। ডিজিটাল নাম্বার প্লেটও পেয়ে গেলাম। দালাল ছাড়া বিআরটিএ তে এক্সাম দিয়ে নিজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে ফেললাম। একবারে সব কিছু কমপ্লিট করেই Honda Livo 110 বাইকটি নিয়ে অফিসে যাতায়াত শুরু করলাম। বেশকিছুদিন চালানোর পর নিজের মধ্যে একটা কনফিডেন্স গ্রো করলো। 

এবার মনে হতে লাগলো বাইক কিনেছি কিন্তু লং ট্যুর দিবো না এইটা তো হয় না। বন্ধুদের সাথে সিদ্ধান্ত হলো মুক্তাগাছা যাব মন্ডা খেতে আর সাথে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আসব। দুপুরের মধ্যেই ভালো ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরলাম।

তখন আবার নতুন প্ল্যান হলো জুম্মার নামাজ পড়ে বিরিশিরি, নেত্রকোনা যাব। প্ল্যান অনুযায়ী রওনা হলাম। কিন্তু পথ ভুল করলাম চলে গেলাম অজানা এক রোডে। পথে এক্সিডেন্ট করলাম বাইকের ৮৫+ স্পিডে। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে হঠাৎ ব্রেক করতে গিয়ে চাকা স্লিপ করে পিলিয়ন সহ পড়ে গেলাম। ফুল ফেস হেলমেট, গ্লাভস, জ্যাকেট, শু পড়া ছিলাম। তাই ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। তবে হাটুতে ব্যথা পেয়েছি। 

হাটুর ব্যথা নিয়ে আমি বাইক চালানোর মত অবস্থায় ছিলাম না। তবে খুব বড় কোনো ক্ষতি হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা দয়া করে ফুল ফেস ভালো মানের হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবেন না।

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

এই গতিতে অন্য কোন বাইক হলে হয়ত বাইকের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হত। আমার  Honda Livo 110 বাইকটির তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয় নি। কোন কিছু ভাঙ্গেনি, শুধু রঙ উঠেছিলো আর কিছু  জিনিস বাকা হয়ে গিয়েছিল। আবার যাত্রা শুরু হল। আমি যেহেতু বাইক চালানোর মত অবস্থায় ছিলাম না তাই অন্য একজন আমার বাইকটি চালালো। সব মিলে ঐদিন ট্যুরটা ভালো ছিল। 

বিরিশিরি ঘুরা, রাতে মুক্তাগাছার মন্ডা খাওয়া সহ সবকিছু। ঐদিন আমার Honda Livo 110 বাইকটি ৪৪০+ কিলোমিটার চালানো হলো। লং ট্যুরে বেশ ভাল পারফরম্যান্স পেলাম বাইকটিতে। পিলিয়ন সহ বাইকের টপ স্পিড পেলাম ৯৫ কি.মি/ঘন্টা।

হাইওয়েতে খুব ভাল পারফরম্যান্স পেয়ে বাইকের প্রতি মায়া আরো বেড়ে গেলো আমার। এতো ভালো সার্ভিস এই সেগমেন্টের খুব কম বাইকে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়। সুতরাং বলাই যায়, হোন্ডার বাইকের কোয়ালিটি আছে। Honda Livo 110 বাইকটিতে এখন পর্যন্ত আমি ৭/৮ টা সার্ভিস নিয়েছি। সব গুলো সার্ভিস, কাজিপাড়া হোন্ডা শোরুম করিম মটরস এ করিয়েছি। বাইকের মেজর কোনো কিছুই হয়নি এখন পর্যন্ত।

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

আমি আমার Honda Livo 110 বাইকে নিয়মিত ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করি। আমার বাইকটিতে আমি 10w30 গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। ১ম ২ বার Honda এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। এর পরের ২ বার Shell এর মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল তার পরের ২ বার Motul এবং এখন Mobil এর ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করতেছি। 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ৩৮০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

আমি আমার Honda Livo 110 বাইকের প্রথম ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্রেক ইন পিরিয়ড মেইনটেইন করেছি। তখন সর্বোচ্চ স্পিড ৪৫ পর্যন্ত উঠাতাম। ব্রেকইন এর পর বেশ ভাল স্পিড উঠে, তবে আমি ৬০ এভারেজ স্পিডে আমার বাইক রাইড করি। মাইলেজ এর ব্যাপারে মোটামুটি বলতে পারি অকটেন এর কোয়ালিটির উপর মাইলেজ নির্ভর করে। 

আমি লাষ্ট যখন মাইলেজ টেস্ট করি তখন ৬৩ কিলোমিটার মাইলেজ পেয়েছি ১০০ টাকার অকটেনে। তার মানে হল প্রতি লিটার অকটেনে ৫৬ কিলোমিটার। আমার কাছে এর এই ৫৬ কিলোমিটার মাইলেজ বেশ সন্তোষযনক।

Honda Livo 110  বাইকের কিছু ভালো দিক-

  • ১১০ সিসি সেগমেন্ট এর খুব ভালো একটি বাইক ।
  • এই সেগমেন্ট এর অন্যান্য বাইকের তুলনায় এর ব্রেকিং ‍সিস্টেম অনেক ভালো ।
  • কালার কোয়ালিটি যথেষ্ট ভালো।
  • ইঞ্জিন সাউন্ড খুব স্মুথ।
  • এই সেগমেন্টের সেরা লুকিং এর বাইক এটা।
  • লম্বা মানুষদের জন্য পারফেক্ট একটি বাইক।
  • বাইকটির মাইলেজ পুরোপুরি সন্তোষজনক।

Honda Livo 110  বাইকের কিছু খারাপ দিক-

  • চিকন চাকা ।
  • নিয়মিত বাইকটি যত্ন নিতে হয়।
  • পেছনের সাসপেন্সন বেশ হার্ড।
  • স্পিড ৭০ উঠার পর স্পিডআপ হতে একটু টাইম নেয়।
  • হেড লাইটের আলো কিছুটা কম।

সবাই অভিযোগ করে Honda Livo 110 বাইকের চাকা চিকন। হ্যা, এর চাকা চিকন। তবে ব্রেকিং এর সঠিক নিয়ম মেনে ব্রেক করলে এই ব্যাপারটা তেমন কোন সমস্যা না। যেহেতু Honda Livo 110 বাইকের লুক ১৫০ সিসি বাইকের মত। তাই অনেকে এই বাইকটিকে ১৫০ সিসি বাইকের সাথে তুলনা করে ভাবে Livo বাইকের চাকা চিকন।

 সর্বোপরি আমার মনে হয় Honda Livo 110 বাইকটি চালিয়ে কেউ হতাশ হয়নি। ওভারঅল বাইকটি যে কাউকে পুরোপুরি ইমপ্রেস করতে সক্ষম।

Honda Livo 110 ৯০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ

  

সবসময় খেয়াল রাখবেন আপনার রাইড যেনো সেইফ হয়। চালানোর সময় উল্টাপাল্টা চালানো থেকে বিরত থাকবেন। Honda Livo 110 যেহেতু হোন্ডা'র প্রোডাক্ট সুতরাং এর উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেন। নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন এই বাইক।আমি আমার বাইকটি কেনার পর থেকে Honda bangladesh থেকে অনেক হেল্প পেয়েছি। তারা নিজে থেকে আমার বাইকের খোঁজ নিয়েছে। কখন সার্ভিস করাতে হবে, কি করলে ভালো হয় সব ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে। 

যা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। Honda Livo 110 বাইকটি নিয়ে আপনি সিটি রাইড এর পাশাপাশি লং ট্যুরে ভালো সাপোর্ট পাবেন। খুব চমৎকার সার্ভিস দেয় যে কোনো রাইডে। শুধু বাইকের যত্ন নিতে শিখুন, বাইকের ভাষা বুঝতে শিখুন। সব শেষে বলবো হ্যাপি বাইকিং। ধন্যবাদ

লিখেছেনঃ রৌদ্র

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।  

Published by Raihan Opu Bangla