Shares 2
Honda livo 110 ৫৫০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - আদনান
Last updated on 18-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
আমি আদনান, একজন Honda livo 110 ইউজার ৷ আমার কেনা এটিই প্রথম বাইক এবং নিজের রোজগারে কেনা বলে এটি আমার কাছে অনেক স্পেশাল। Honda livo 110 বাইকটি নিয়ে ৫৫০০ কিলোমিটার রাইডের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই ।
বাইকটির ওডো ৫৫০০ কিলোমিটার যার প্রতি কিলোমিটার এ আমার আছে বিভিন্ন ভাল মন্দ অভিজ্ঞতা যা আজ শেয়ার করতে এই লেখা। আমার জেলা নোয়াখালী হলেও বাইকটি কেনা হয়েছে কুমিল্লা হোন্ডা শো-রুম সামিয়া অটো থেকে যাদের নিয়েও আছে একাধিক তিক্ত অভিজ্ঞতা। আর বাইকটা চালাই আমার কর্মস্থল চট্টগ্রামে।
২০১০ সাল, প্রথম দুলাভাই এর বাইকে নিজেই চালাতে যাওয়া আর এক্সিডেন্ট, আসলে আমি বাইক চালানো কারও কাছে কখনো শিখিনি, ছোট বেলা থেকেই দেখেছি কেও বাইক চালানো শেখার সময় বলে যে ক্লাচ ধীরে ধীরে ছেড়ে এক্সিলারেটর বাড়াতে হয়।
আমি ৪ বছর বয়স থেকে ২ টাকায় ১ ঘন্টা ভাড়া নিয়ে ছোট সাইকেল চালানো মানুষ তো, সাহস একটু বেশিই ছিল। সে দিন এলাকার একটা দোকানে ভাইয়া বাইক সার্ভিসে দিয়ে ছিল। আমাকে পাঠালো সার্ভিস হয়েছে কিনা দেখে আসতে। আমি গেলে অই সার্ভিসম্যান আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি বাইক চালাতে পারি কিনা, ভাবলাম এই সুযোগে যদি চালানো যায় মন্দ কিসের? আমিও বললাম যে হা বাইক চালাতে পারি। সে আমাকে পেছনে বসিয়ে তার বাড়ি নিয়ে গিয়া বলল, আমি নামাজ পড়ব আর দুপুরের খাবার খাবো তুমি বাইকটা আস্তে আস্তে চালিয়ে বাসায় চলে যাও।
Click To See Honda livo 110 Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
আমি তো মহাখুশি, কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। আমি ১.৫ কিলোমিটার রাস্তা লো এক্সিলেটরে কোন ব্রেক করার প্রয়োজন ছাড়াই আসার পর হঠাত মাথায় কি যেন হল। জোরে এক্সিলারেটর দিতেই বাইকের গতি ৪৫+ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, হুট করে খেয়াল করলাম সামনে একটি মোড়, ব্রেক করব কখন ভাবতে ভাবতেই একটা রিক্সা আমার বাইকের থেকে ৩০ মিটার দূরে চলে এসেছে।
কিন্তু দুখের বিষয় আমি তখন ব্রেক খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই বুদ্ধি করে দিলাম লাপ। গাড়ি পরল একটা ধান খেতে আর রাস্তার পাশে আমি। রিক্সার যাত্রি কিংবা আমি কারোর কোন কিছু না হলেও সে যাত্রায় বাইক্টা আবার সার্ভিস করাতে ৩০০০ টাকা লেগেছিল। আমার স্মরনীয় একটি দিন। আর বাইকের প্রতি আগ্রহটা তখন থেকে বাড়তে থাকে।
Honda livo 110 এর ফিচার:-
Honda livo 110 ১০৯.৫ সিসির এর একটি কমিউটার টাইপ বাইক, যাতে এয়ার কুল্ড কুলিং সিস্টেম এবং ৪ স্ট্রোক BS4 SI ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। এর সামনে দেওয়া আছে ২৪০ এমএম এর ডিস্ক ব্রেক আর পেছনে দেওয়া আছে ১৩০ এমএম এর ড্রাম ব্রেক।
এর ম্যাক্সিমাম পাওয়ার ৮.৭৯ পিএস/৭৫০০ আরপিএম আর টর্ক ৯.৩ নিউটন /মিটার @ ৫৫০০ আরপিএম। এই হল মেজর ডিটেইল। আমি একটি পওয়ার প্লান্টের সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং পড়াশোনার জন্য শহরে ভার্সিটিতে যেতে হয় যা কিনা আমার অফিস থেকে ২৭ কিলো দূরে৷ তাই ভাল মাইলেজ আর কন্ট্রোল এর চিন্তা করে Honda livo বাইকটি নেওয়া।
Honda livo 110 এর মাইলেজ অনেক ভাল, আর সামনের ডিস্ক ব্রেক তো এর কন্ট্রোলিং এক অন্য লেভেলে নিয়ে গিয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার মাইলেজ পাচ্ছি সিটি রাইডে । বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ঠ ।
তবে এই মাইলেজ প্রথম থেকেই পাইনি। ৪৫০০ পর্যন্ত আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪৫-৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার। কিন্তু রেয়ার টায়ার স্কিড করে বলে টায়ার সাইজ ৮০/১০০ এর স্থলে ১০০/৯০ টায়ার মডিফাই করে লাগানোর পর কার্বোরেটর টিউনিং করাই আর মাইলেজ ৬০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার পেতে শুরু করি ৷
এই বাইকের টপ স্পিড আমি ৯৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পেয়েছি ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়েতে ৷ তবে টায়ার মডিফিকেশন এর পর তা কমে ৯০ তে আসে। যা আমার জন্য যথেষ্ট বলেই মনে হয়েছে, কিন্তু টায়ার মডিফাইড এর পর বাইক এর কন্ট্রোল অসম্ভবরকম ভালো হয়েছে। এই বাইকে আমার প্রথম লং ট্যুর রমজানের শেষদিকে ঈদে বাড়ি যাওয়া।
চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা - চাঁদপুর হয়ে বাসায় যাওয়া প্রায় ২৬০ কিলোমিটার এর জার্নিতে আমি পারফরম্যান্স পেয়েছি অসাধারণ। এর চেয়ে বড় লং রাইড আর এখনো দেওয়া হয়নি।
এখন পর্যন্ত ৫৫০০ কিলোমিটারে আমার বাইকের এয়ার ফিল্টার ১ বার পরিবর্তন করা হয়েছে । ১ম ৩০০ পরে ১০০০ এবং এর পর ৯০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল মিনারেল দিয়েছি। ৫০০০ এর পর সেমি সিন্থেটিক দেওয়া শুরু করেছি। এছাড়া সঠিক সময়ে চেকাপ ছাড়া বাইকের কোথাও কোন খরচা বা পরিবর্তন করিনি।
Honda livo 110 বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- লুকিং এই বাজেটে অসাধারণ
- অসাধারন মাইলেজ
- ব্রেকিং পারফরম্যান্স অনেক ভালো
- লো আরপিএম এ ইঞ্জিন সচল থাকে
- সিটিং পজিশন অনেক আরামদায়ক
Honda livo 110 বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- বাইকের স্টক রেয়ার টায়ার টা অনেক চিকন বলে একটু ভেজা রাস্তায় স্কিড করার প্রবনতা বাড়ে
- হেডলাইট AC এবং হেলজেন হওয়াতে রাতে রাইড করা খুব কষ্টকর
- ইনিশিয়াল এক্সিলারেশন বা রেডি পিকাপ খুবি কম
- হুট করে গতি তোলা সম্ভব নয় তাই ওভারটেকিং এ বাড়তি সতর্ক থাকার প্রয়োজন
- বিল্ড কোয়ালিটি খুব বাজে
সব মিলিয়ে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু বললে Honda livo 110 বাইকটিকে ১১০ সিসি সেগমেন্ট এর বেস্ট বাইক বলা চলে। তাই আমি এই বাইকটাকে এই সেগমেন্ট এর বেস্ট বাইক বলি। টপ স্পিড একটু কম ৮৫-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
পার্ফরমেন্স ভালো চাইলে আপনি রেয়ার টায়ার টা পরিবর্তন করে নিতে পারেন। আর হেড লাইটের সমস্যার সমাধান হচ্ছে একটা ব্রিজ রেক্টিফায়ার ইউজ করে ৩০ ওয়াটের একটা LED লাগিয়ে নিবেন। সমস্যার সমধান অনেকটাই হয়ে যাবে।
আর অবশ্যই যে কোন রাইডে সার্টিফাইড ফুল ফেস হেলমেট ব্যবহার করবেন,কেননা যে কোন দুর্ঘটনায় হেলমেট আপনার জীবনকে কিছুটা হলেও সুরক্ষা দিতে সহায়ক। তাই হেলমেট পরুন, গতি কমান, নিরাপদ রাইড করুন। হোন্ডা বাইক দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আমাদের ওয়েবসাইটে । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ আদনান
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Raihan Opu Bangla