Shares 2
Honda Dream 110 ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - রিফাত
Last updated on 31-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
আমার নাম মোঃ রিফাত মোল্লা । আমি দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর বসবাস করি । আমার জীবনের প্রথম বাইক হচ্ছে Honda Dream 110 । আজ আমি আমার বাইকটি নিয়ে রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
ছোট থেকেই বাইক আমি খুব ভালোবাসতাম । আমি আসলে ঘুড়তে অনেক পছন্দ করি অনান্য বাহন দিয়ে ঘুড়তে টাকা এবং সময় লাগে অনেক, সেই ক্ষেত্রে বাইক অনেক সাশ্রয়ী । বাইক দিয়ে আমি এখন যখন মনে চায় নিজের ইচ্ছা মতো ঘুড়তে পাড়ি।
বিভিন্ন কাজে প্রায় আমাকে শহরে যেতে হয় যা সিএনজি দিয়ে যেতে হতো এখন আর তা লাগেনা বাইক থাকায় তা সহজেই যেতে পারি, আর বাইক দিয়ে অফিসে যাওয়া আসা করি যা আমাকে অনেক সময় ও টাকা বাচিয়ে দেয় , শশুর বাড়ি যেতে দেখা যাও এক গাড়ি থেকে নেমে অন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয় এটা অনেক বোরিং লাগতো আমার কাছে ।
আমার এখন বাইক থাকায় একদম শশুর বাড়ির দরজার গিয়ে নামি । এক কথায় বাইক রাইড করে আমি খুব আনন্দ ফিল করি, বাইক কে আমি আমার জিবনের একটি অংশ হিসেবে মনে করি বলতে পারি নিজের বউয়ের চেয়ে কোনো দিকে কম নয়, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ বাইক কে ভালোবাসার ।
ছোট বেলা থেকেই আমি বাইক খুব ভালোবাসি, আমার চাচার একটি বাইক ছিলো সে যখন অফিসে যেতো তখন বাইক নিয়ে যেতো, আর অফিসে যাওয়ার আগে তার একটি মেয়ে ছিলো তাকে সে ঘুড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো, আমিসহ আরও চাচাত ভাই কয়জন ছোট বাচ্চা ছিলাম আমাদের ও মাঝে মাঝে বাইকে উঠিয়ে ঘুড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো ।
তখন ঐ টুকু সময় নিজেকে অনেক বড় মনে হতো এই যে আমি বাইকে উঠেছি তখন অনেক খুশি হতাম, তখন থেকেই মনে মনে নিয়ত করেছিলাম বড় হলে আমিও একটি বাইক কিনবো, আসতে আসতে একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম পড়াশোনায় ও ভালো ছিলাম তখন আম্মু একদিন বললো তুই কামিল পাস করলে তোকে একটি বাইক কিনে দেবো, তখন নিজে নিজে ভাবতাম আমার তো বাবা নেই আম্মু এত টাকা পাবে কোথায় বাইক কিনে দেওয়ার জন্য ।
তখন নিজেই ভাবলাম আমি নিজেই কামাই করে বাইক কিনবো, তখন থেকেই নিয়ত করেছিলাম বড় হলে একটি বাইক কিনবো, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই স্বপ্নের বাইকটি কেনার তৌফিক দিয়েছেন, বাইকটি কিনতে পেরে আমি খুব খুশি।
আসলে প্রায় প্রত্যাক যুবকেরই মনের আশা হচ্ছে একটা বাইক, সেই হিসেবে আমারও মনের আশা ছিলো একটা বাইক কেনা, সে জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কারণ একে তো আমার বাবা আমার বয়স যখন ৯ বছর তখন মারা যান, দ্বিতীয়ত আমরা হচ্ছি মধ্যবিত্ত ইচ্ছা থাকলেউ উপায় থাকেনা।
আমি লেখাপড়া করার কপাশাপাশি জব করি এবং হালকা পাতলা ফ্রিল্যান্সিং করে কিছু টাকা জমাই আর সেই অল্প টাকা দিয়ে সাধ্যের মধ্যে বেষ্ট বাইক খুজতে থাকি, আর বেষ্ট বাইক খুজতে গিয়ে কিছুটা চিন্তায় পরি যে কোন মডেলের বাইকটি কিনবো, তখন ফেসবুকে কিছু গ্রুপে জয়েন ছিলাম ।
প্রিয় গ্রুপ বাইক বিডিতেও জয়েন ছিলাম বাইক বিষয়ে একটি পোস্ট করলাম অনেকেই অনেক পরামর্শ দিলো এটা নেন ওটা নেন, এগুলো নিয়ে ইউটিউবে ও অনেক ভিডিও দেখলাম, যারা যারা হিরো হোন্ডা চালায় তাদের থেকেও তাদের বাইকের বিস্তারিত শুনলাম যার টিভিএস চালায় তাদের থেকেও শুনলাম আরও কয়েকটি বাইকের বিষয়ে শুনলাম ।
আমার ভালো লাগে হোন্ডা ড্রিম ১১০। বিশেষ করে আমার কাছে যে টাকা ছিলো সেই টাকার মধ্যে এই বাইকের লুক এবং মাইলেজ খুব ভালো লাগলো । যেই ভাবা সেই কাজ তার কিছুদিন পরেই আমি বাইকটি ক্রয় করি।
বাইকটি আমি আমি নিয়েছিলাম ২০-১-২২ ইং তারিখে । বাইকটির বাজার মূল্য ছিল তখন ৯০ হাজার ৫০০ টাকা। বাইকটি কিনেছিলাম হোন্ডার অফিসিয়াল শোরুম রুপালি মটরস জামালপুর থেকে।
বাইকটি কিনতে যাওয়ার দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার । বাইক কবে কিনতে যাবো তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম , বৃহস্পতিবার আমার মাদ্রাসা হাফ থাকে ১২ টায় ছুটি হয়, তবে আমি ১১ টায় ছুটি নিয়ে এক ছোট ভাই নাম ইলিয়াস তাকে সাথে নিয়ে সকাল ১১ঃ১০ এর দিকে সিএনজি স্টেশন এ যাই ।
দেওয়ানগঞ্জ থেকে জামালপুর এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর কাঙ্ক্ষিত শোরুমের সামনে এসে নামি, পরে সিএনজি ভাড়া দিয়ে আমরা দুজন শো-রুমের ভিতরে ঢুকি, পরে শো-রুমের ম্যানেজারের সাথে ড্রিম ১১০ বাইকটির বিষয়ে কথা বলি ।
তারা কথা বলার পাশাপাশি আমাদের চা খওয়ায়, পরে সব কাগজ পত্র জামা দেই । আমাদের পছন্দ করা ব্লাক কালার বাইকটি তারা তাদের মেকানিকদের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং বলে আপনারা ঘন্টা দুয়েক পরে আসেন আমরা বাইকটি রেডি করি এই সময়ে ।
বাইক রেডি করে তারা চাবি আর হাতে দিয়ে বাইক চালানোর কিছু টিপস্ দিয়ে আমাদের কে বিদায় করে দেন, তখন ইলিয়াস ড্রাইভিং করে আমাকে নিয়ে দেওয়ানগঞ্জের দিকে রওনা দেয় এবং আসার সময় পাম্প থেকে ৮৬০ টাকার তেল নিয়ে বাড়ি চলে আসি।
আমি আসলে আমার বাইক কেনার পরে বাইক চালানো শিখেছি, বাইক কিনে বাড়ি আনার পরে ছোট ভাই ইলিয়াস বলে নেন এবার চালান, কিন্তু আমি তো চালাতে পারিনা সে আমাকে বুঝিয়ে দেয় কোনটার কি কাজ পরে আমি সেল্ফ স্টাট দিয়ে গিয়ার ফেলে ক্লাস একটু জোরেই ছেরে দেই, যার কারণে হালকা একটু সামনে গিয়ে বাইক বন্ধ হয়ে যায় ।
পরে ইলিয়াস আবার বুঝিয়ে দেয় আস্তে আস্তে পিকাপ টানবেন আর আস্তে আস্তে ক্লাস ছাড়বেন , তাখন পাচ মিনিট চালাই আলহামদুলিল্লাহ , এটাই আমার প্রথম বাইক চালানো এবং চালানো শেখা অনুভূতি । সেই সময় আমি বাইক চালাতে পেরে যা খুশি হয়েছিলাম তা বলে বুঝাতে পারবোনা, ইলিয়াস আমায় বলেছিলো বাইক চালিয়ে কেমন অনুভূতি পেলেন তখন আমি বলেছিলাম নতুন বাইক দিয়ে নতুন চালান শিখলাম অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যাবে না।
আমার বাইকটি চালানোর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে আমার ওয়াইফ, আমি যে প্রতিষ্ঠানে জব করি সেখানে একটা পোস্ট খালি হলে নতুন শিক্ষক নেওয়ায় জন্য নিয়োগ দেয় , তখন সেখানে আমি আমার ওয়াইফ কে জবটা নিয়ে দেই, আমি যখন একা যেতাম সেই সময় সাইকেল চালিয়ে যাইতাম, যখন আমার ওয়াইফ কে জব নিয়ে দিলাম তখন তো তাকে সবাইকেলের পেছনে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না, তখন ওয়াইফ বলে বাইক কিনেন একটা । আমি আগেই বাইক কিনতে চেয়েছি আমার ওয়াইফ বলছিলো কিছুদিন পরে কিনেন ।
তার পরে বাইক কেনা , বাইক কেনা আমার স্বপ্ন ছিলো তবে বউ ই দেরি করে কিনতে বলেছে আবার বউ ই তারাতাড়ি জোড় দিয়ে কিনিয়েছে । বাইকের ফিচার বলতে বাইকেন গ্রফিক্সটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে, তাছাড়া এই দামে সেল্ফ সহ বাইক পাওয়া মুশকিল যা আমার কাছে আরও বেশি ভালো লেগেছে ।
সাইলেন্সার পাইপের উপর পা রাখার গাডটিও বেশ ভালো লেগেছে, তেলের টাংকি টিও ভালো লেগেছে যা খুলার পরে লাগানোর সময় নিচের দিকে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে অটোমেটিক লেগে যায় । বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ অনেক কম এটিও ভালো লেগেছে।
সিট টিও অতন্ত্য আমারদায়ক যা আমর খুব ভালো লেগেছে , সাসপেনশনটিও খুব ভালো ঝাকি পরলেও তেমন বুঝা যায়না, ইঞ্জিন থেকে ধুয়া একদম কম বের হয় এটিও ভালো লেগেছে । সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সকালে উঠার পরে এক কিকেই স্টার্ট নেয়, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করার জন্য আমি বাইক ব্যাবহার করি এ ক্ষেত্রে অনুভূতির কথা বলতে গেলে খুবই ভালো অনুভূতি ফিল হয় । ৫-৭ মিনিটেই আমি আমার অফিসে পৌছে যাই আবার ছুটি হলে ৫-৭ মিনিটে বাসায় চলে আসি, এই অল্প সময় প্রতিদিন রাইড করি আলহামদুলিল্লাহ। তাই আর বেশি কিছু লিখতে পারলাম না।
আমি বাইক কিনেছি ২০-০১-২২ ইং তারিখে এখন পর্যন্ত আমি কোনো সার্ভিস করাইনি বাইকের শোরুম থেকে ১ম সার্ভিসের জন্য যখন ফোন দেয় তখন গিয়েছিলাম সার্ভিস করাতে তখন তারা কোনো সমস্যা না পেয়ে আর সার্ভিস করিয়ে দেয় নি, এখন পর্যন্ত শোরুম থেকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো, আমার কোনো সমস্যা না থাকায় আমি এখনো কোনো সার্ভিস করাই নি।
বাইক কেনার পরে প্রথমবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার আগে ৪৫ মাইলেজ পেয়েছি তার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার প্লাস কিলোমিটার বাইকটি চালিয়েছি এক রকম মাইলেজে পাচ্ছি । এভারেজ ৫৮-৬২ করে মাইলেজ পাচ্ছি ২৫০০ কিলোমিটার আগে যেমন পেয়েছি ২৫০০ কিলোমিটার পরেও তাই পাই।
বাইকের যত্নের কথা বলতে গেলে প্রথমে আমি বলবো আমি নিজে যখন রাইড করি সব দিকে নজর রাখি যেনো কোনো কারনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় এবং কোনো গর্তের উপর দিয়ে না নিতে হয়, বা ব্রেক করার সময় আস্তে আস্তে ব্রেক করি।
বাইরে বের হওয়ার সময় বাইকটি ভালো ভাবে মুছে বের হই৷ রাইরে থেকে বাড়ি আসার পরে ভালো করে ঢেকে রাখি, এবং মাসে ১ বার নিজেই ওয়াশ করি শ্যম্পু দিয়ে, এক কথায় বাইকে যেনো কোনো স্পট না পরে এবং সব সময় নতুনের মতো দেখা যায় তেমন ভাবেই রাখি।
ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহারের ক্ষেত্রে আমি এখন পর্যন্ত হোন্ডা ব্রেন্ডের 4T 10w30 গ্রেডের অয়েল ব্যাবহার করি , এটা আমি লাস্ট কিনেছি ৪৮০ টাকা দিয়ে, এই ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করে আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট কারণ এই অয়েল ব্যাবহার করে এখনো কোনো খারাপ দিক খুজে পাইনি।
এখন পর্যন্ত আমার বাইকের কোনো পার্টস পরিবর্তন করিনি। মোডিফাই বলতে শুধু বাইকের সিট কাভার একবার বদলিয়েছি, তা ছাড়া সব আগের মতোই আছে। এই বাইক দিয়ে তোলা আমার সর্বোচ্চ স্পীড ৮০ । এর বেশি তোলার সাহস হয়নি।
Honda Dream 110 বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- মাইলেজ খুব ভালো।
- সাউন্ড খুব স্মুথ, যা আপনাকে কখনও বিরক্তিকর বানাবে না।
- চেন কভার টি খুব ভালো, ময়লা কম হয়।
- গিয়ার বক্সটি খুব ভালো যার কারণে আরামেই গিয়ার পরিবর্তন করা যায়।
- বাইকটি চালিয়ে খুব মজা অনায়সে ২ জন পিলিয়ন নিয়ে সুন্দর ভাবে রাইড করা যায়।
Honda Dream 110 বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- মিটার একদম বাজে ৪০০০ কিলোমিটার না চালাইতেই মিটার নষ্ট হয়ে গেছে।
- সাইলেন্সার পাইপের রঙ ১০০০ কিলোমিটার না চালাইতেই উঠে গেছে ।
- টায়ার টা আরও একটু মোটা দেওয়া উচিত ছিলো, বৃষ্টির দিনে স্লিপ করে এই টায়ার।
- পিছনের ব্রেক হালকা কাজ করে, টাইট করলেও সেইম পবলেম।
- লং জার্নি করলে ইঞ্জিন ওভার হিট হয়ে যায়।
বাইকটি নিয়ে লম্বা দূরত্ব রাইড বলতে আমি দেওয়ানগঞ্জ থেকে জামালপুর যাই দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার ৮-১০ বার গিয়েছি । তো আলহামদুলিল্লাহ লং-টাইম রাইড করে বেশ মজাই পাওয়া যায় তবে হালকা কোমর ব্যাথা করে।
বাইক নিয়ে আমার চুড়ান্ত মতামত হচ্ছে যারা আমার মতো মধ্যবিত্ত আছে তাদের জন্য এই বাইকটি খুব ভালো বলে আমি মনে করি, কারণ এটার মাইলেজ এবং লুকসহ বাকি দিক গুলো বিবেচনা করে দেখা যায় এই টাকার মধ্যে অনান্য কোম্পানিগুলো যে বাইক গুলো দিচ্ছে সেগুলোর থেকে এই বাইকটি এগিয়ে আছে তাই আমি এই বাইকটি কে চয়েজ হিসেবে ১ নম্বরে রাখলাম ।
পরামর্শ হিসেবে বলতে চাই যে কথাগুলো খারাপ দিক হিসেবে বলেছি সে গুলো যেনো সামনের দিন গুলোতে সমাধান করে দেয়, এটাই প্রত্যাশা থাকবে হোন্ডা কোম্পানির কাছে। সর্বোপরি বলতে চাই বাইকবিডি গ্রুপ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একটি গ্রুপ দোয়া করি আরও অনেক দূরে এগিয়ে যাক বাইকবিডি। ধন্যবাদ ।
T
Published by Shuvo Bangla