Shares 2

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নিয়ে বাইকবিডি টিমের একটি রিভিউ

Last updated on 07-Jan-2025 , By Shuvo Bangla

হোন্ডা কোম্পানি বিশ্বের সেরা বাইকগুলো তৈরী করে থাকে । হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর (Honda CBR 150R) হল হোন্ডার তৈরী করা সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক মোটরসাইকেল । মোটের উপর বিশ্বের এই প্রান্তের বাজারেও হোন্ডার একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । বাংলাদেশের প্রত্যেক অভিজ্ঞ বাইক চালকই অ্যাটলাস দ্বারা জোড়া লাগানো হোন্ডার বাইকগুলোর কোয়ালিটি সম্পর্কে জানে । এটা হতে পারে সিডি ৮০, সিডি ১০০, সিডি ১২০ বা বিখ্যাত সিডি ১৮৫ সবগুলো বাইকই অত্যন্ত ভালমানের ।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর নিয়ে বাইকবিডি টিমের একটি রিভিউ

Honda CBR 150r

Also Read: Honda Supra X 125 FI Price In BD

সবকিছুর উপরে বাংলাদেশের বাইকপ্রেমীরা জানে হোন্ডা কি ধরনের কোয়ালিটি বজায় রেখে বাইক তৈরী করে । যদিও কোম্পানিটি কিছু ভারতীয় কোম্পানি যেমন বাজাজ, টিভিএস এর কাছে বাজার হারাচ্ছে কিন্তু হোন্ডার প্রধান সমস্যা হল এর নিজ দেশেরই বিখ্যাত ব্র্যান্ড ইয়ামাহা । তারাও অত্যন্ত দক্ষ বাইক তৈরীকারক এবং কিছু পুরানো মডেল যেমন আরএক্স১০০ এর মাধ্যমে তারা স্থানীয় বাজারে সফলতাও পেয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে বাইকের বাজার সম্পূর্ণভাবে বাজাজের তৈরী পালসারের নিয়ন্ত্রণে এবং খুব সম্প্রতি ইয়ামাহার বাজারজাত করা এফজেড সিরিজের বাইকগুলোও ব্যাপক সফলতা পেয়েছে । এর ফলে এমনকি বাজাজেরও  বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে । শধুমাত্র এ কারনেই বিখ্যাত এই কোম্পানিটি তার  প্রতিযোগীদের হারানোর জন্য অপেক্ষা করছিল সঠিক সময়ের । এরই ফলাফলস্বরূপ কোম্পানিটি নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ও অত্যন্ত উন্নত মানের হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ।

Also Read: হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর ২০১৬ এখন বাংলাদেশে

যদিও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এখনও আমাদের দেশের বাজারে এসে পৌঁছায়নি। কিন্তু বাইক ভক্তদের এ  বাইকটি সম্পর্কে একটি পর্যালোচনার ব্যাপক অনুরোধের কারনে এটা এখানে তুলে ধরা হল । এটি প্রথমবারের মত বাংলায় উপভোগ করুন শুধুমাত্র বাইকবিডি  তে ।

Honda CBR 150r

স্টাইলঃ 

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর দেখতে প্রায় এর পূর্বের মডেল হোন্ডা সিবিআর ২৫০আর  এর মত । এর স্টাইল যথেষ্ট আবেদনময় কিন্তু ১৫০ সিসি ইঞ্জিনের তুলনায় এর আকার যথেষ্ট বড় । এর Y আকৃতির কাল আবরণ দ্বারা ঘেরা হেডলাইট সর্বাধুনিক ভিআফআর-১২০০ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যদিও সিবিআর ১০০০ আরআর এ ট্যাঙ্ক পর্যন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল রঙের গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়েছিল । এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনটি একে এর পূর্বের মডেল হতে পৃথক করেছে । 

Also Read: Honda CB Hornet 160R টেস্ট রাইড রিভিউ - টিম বাইকবিডি

এমনকি হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর পিছনের লাইটও সিবিআর২৫০ আর এর মত যেটা একটি নন-এলইডি বাতি । ১৫০আর ও ২৫০আর এর মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল এদের এগজস্ট নলের আকার কিছুটা ভিন্ন এছাড়াও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ রয়েছে কালো রঙের অ্যালয় হুইল ( চাকা ) । আপনি যতই বাইক দুটির দিকে গভীরভাবে তাকাবেন ততই আপনি বুঝতে পারবেন যে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর একটি দারুন মোটরসাইকেল । 

Also Read: হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর মালিকানা রিভিউ

সামনের টায়ারগুলো ১০০/৮০-১৭ এবং পিছনের টায়ার গুলো ১৩০/৭০-১৭ যেগুলো সিবিআর ২৫০আর এর টায়ারগুলো হতে  কিছুটা ছোট । এছাড়াও কাঁদা প্রতিরোধ করার প্লেটগুলোও যথাযথভাবে স্থাপন করা হয়নি ফলে উঁচু রাস্তার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এগুলো লেগে যায় । হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ অত্যন্ত ভিন্ন একটি রঙ ব্যবহার করা হয়েছে যেটা সিবিআর ২৫০আর হতে সম্পূর্ণ আলাদা । এতে দ্বিস্তর বিশিষ্ট রঙের প্রলেপ রয়েছে যা  সিবিআরটিকে একটি তরুনের মত লুক দিয়েছে । এই বাইকের স্ট্যান্ডার্ড ও ডিলাক্স শ্রেণী দুটির মধ্যে কেবল রঙের পার্থক্য রয়েছে ।

Honda CBR 150r

ইনসট্রুমেন্ট ক্লাস্টার ও  সুইচ গিয়ারঃ  

হোন্ডা সিবিআর ১৫০ ও সিবিআর ২৫০ এর কনসোলও ( যেখানে সকল যন্ত্রাংশ সাজানো থাকে ) একই  কিন্তু হোন্ডা সিবিআর ১৫০ তে সিলভারের আবরণটি নেই । যদিও হোন্ডা সিবিআর ২৫০ তে নিয়ন রঙের অ্যানালগ টেকোমিটার রয়েছে ,একই টেকোমিটার রয়েছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০তেও কিন্তু এটা কালো রঙের ।  হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর টেকোমিটারটি ১৩০০০ আরপিএম পর্যন্ত গুনতে পারে যেখানে সিবিআর ২৫০ এর টেকোমিটারটি গুনতে পারত ১২০০০ আরপিএম পর্যন্ত । 

Also Read: Honda CB Hornet 160R Celebration Offer

এর ডিজিটাল ডিসপ্লে অনেকগুলো তথ্য যেমন ওডোমিটার, স্পিডোমিটার, ফুয়েলমিটার, ট্রিপমিটার  ও ইঞ্জিনের তাপমাত্রা অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রদর্শন করে । ডিজিটাল ডিসপ্লের নিচেই রয়েছে মুড ও অন্যান্য সুইচ । সুইচ গিয়ারের মান অতটা আকর্ষণীয় নয় এবং এগুলো সরাসরি সিবিএস স্টানার হতে অনুকরন করা হয়েছে । এমনকি ফুট-পেগ পর্যন্ত স্টানার হতে অনুকরন করা হয়েছে ।  

হেডলাইট চালু করার সুইচটি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাম পাশে স্থাপন করা হয়েছে এবং এখানে ইঞ্জিন থামানোর কোন সুইচ নেই । একটি প্রিমিয়াম ১৫০ সিসি বাইকের জন্য এটি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয় । হোন্ডা সিবিআর ২৫০ এর সুইচ গিয়ারটি এতে স্থাপন করা যেত কেননা এটা তুলনামুলকভাবে অনেক ভালো ।

পারফর্মেন্স ও গিয়ারবক্সঃ 

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর রয়েছে একটি ১৪৯.৪ সিসি, লিকুইড কুল্ড, ডিওএইচসি, ৪ ভালভ বিশিষ্ট ইঞ্জিন যেটার রয়েছে শক্তি উৎপন্ন করার অত্যন্ত ভিন্ন ধরনের ক্ষমতা। এতে রয়েছে হোন্ডার তৈরী “প্রোগ্রামড ফুয়েল ইনজেকশন” প্রযুক্তি যার মাধ্যমে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ জ্বালানীর সাস্রয় নিশ্চিত  হয় । এটি ১০,৫০০ আরপিএম এ সর্বোচ্চ ১৭.৬ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন হয়। 

এই সংখ্যাগুলো আপনাকে  বাইকটি চালাতে উদ্বুদ্ধ করবে না কিন্তু আপনি যখন রাস্তায় চালাবেন তখন পার্থক্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন । যদিও হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর খুব বেশী টর্ক( ঘূর্ণন ) উৎপন্ন করতে পারে না কিন্তু এর ওজন মাত্র ১৩৮ কেজি হওয়ায় এই পরিমাণ টর্কই ওজন অনুপাতে ভালো শক্তি উৎপন্ন করতে পারে । এর যতই ওজন অনুপাতে ভালো শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকুক শহর এলাকায় চালানোর সময় এটি খুবই ধীরে শক্তি উৎপন্ন করে যদিও সিবিআর ১৫০ খুব দ্রুত টর্কের গতি বাড়াতে পারে । হোন্ডা মোটরকে এই গতি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ । বাইকটি যদি একবার চলতে শুরু করে দ্রুত ৮০০০ আরপিএম এ পৌঁছে যায় এবং আরও কিছুক্ষন চালালে এটা খুব দ্রুত এর বিপদজনক সীমা ১১৭০০ আরপিএম এ পৌঁছে যায় ।

Also Read: ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হোন্ডা বাইক এর দাম | বাইকবিডি September 2023

 হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এ ১২ সেকেন্ডেরও কম সময়ে ০-১০০ কিলোমিটার গতি তোলা যায় । এটি এর পর আরও দ্রুত গতি তুলতে পারে এবং ১৩০ কিলোমিটারের আগ পর্যন্ত এর গতি সহজে অনুভূত  হয় না । ৬-স্পিড গিয়ারবক্সই অত্যন্ত মসৃণ ফলে এগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কাজ করে । এর ক্লাচ  অত্যন্ত হালকা । একটি ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল হিসেবে যা অত্যন্ত বাজে । যখন গতি বাড়তে থাকে  তখন ইঞ্জিন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায় এবং অন্যান্য হোন্ডা ইঞ্জিনগুলোর মত এটিকে অত্যন্ত বিশুদ্ধ ইঞ্জিন বলেই মনে হয় । ইঞ্জিনটি এর বিপদজনক সীমায় পৌঁছালেই শব্দ করে । অনেকেই হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর হতে মাইলেজ আশা করতে পারে প্রতি লিটারে ৩৫- ৪০ কিলোমিটার, কিন্তু এটা যে মাইলেজ দেয় তা হল জ্বালানী ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণ ভর্তি অবস্থায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি ।

চালানো, নিয়ন্ত্রণ ও ব্রেকিং

পেরিমিটার ফ্রেম দ্বারা তৈরী হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর চালানো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার ।  চড়ার ক্ষেত্রে এটি খুব কোমল না হলেও খুব শক্ত নয় । এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এক কথায় বলা যায় অত্যন্ত চমৎকার । যে কেউ খুব দ্রুত হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর গতিপথ খুব দ্রুত বদলাতে পারবে এবং এটা সে অত্যন্ত নির্ভুলভাবেই করতে পারবে।

Also Read: Honda Showroom in Madaripur: M/S PADMA MOTORS

বসার সিটগুলো যথেষ্ট আরামদায়ক এবং বসার স্থানের অবস্থানের কারনে আপনাকে কিছুটা কুঁজো হয়ে বসতে হবে । কিন্তু এর ফলে আপনার কব্জি বা পিঠে কোন ধরনের ব্যথা হবে না ফলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে বাইকে বসে থাকতে পারবেন । এক্ষেত্রে বাইকের হালকা ওজনও আপনাকে সাহায্য করবে । উচ্চ গতিতেও ভালো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারনে আপনি বুঝতেও পারবেন না আপনি কত গতিতে যাচ্ছেন । সামনে ও পিছনে ডিস্ক সেটআপ থাকার কারনে এর ব্রেকিং পারফর্মেন্স অনেক বেড়ে গেছে ।

Honda

Also Read: Honda Bike Showroom in Phulpur: HAQUE AUTOS

সমাপ্তিঃ

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সিবিআর ২৫০আর হতে একটি ভিন্ন মোটরসাইকেল । এর ধার কিছুটা বাজে এবং এর দামও কিছুটা বেশী ( এর প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ামাহা আর১৫ এর সাথে তুলনা করে )। এটা কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে কিন্তু উচ্চ গতিতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যি অতুলনীয় ।

নিন্মে হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর সকল বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলঃ  

*ইঞ্জিনঃ ১৪৯.৪ সিসি, লিকুইড কুল্ড, ৪- ভালভ বিশিষ্ট, ডিওএইচসি, ৪- স্ট্রোক

*ক্ষমতাঃ ১৭.৫৭ বিএইচপি @ ১০৫০০ আরপিএম

*টর্কঃ ১২.৬৬ এনএম  @ ৮৫০০ আরপিএম

*ট্রান্সমিশনঃ ৬-স্পিড ম্যানুয়াল

*সর্বোচ্চ গতিঃ ১৩৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়

*০-১০০ কিলোমিটার হতে সময় লাগেঃ  ১১.৯৫ সেকেন্ড

*জ্বালানী দক্ষতাঃ প্রতি লিটারে ৩৫-৪০ কিলোমিটার

*সাসপেনসনঃ টেলিস্কপিক ফর্ক (সামনে), মনোশক  ( পিছনে )

*টায়ারঃ ১০০/৮০-১৭ (সামনে), ১৩০/৭০-১৭ (পিছনে)

*ব্রেকঃ ২৭৬ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক (সামনে), ২২০ মিলিমিটার ডিস্ক ব্রেক (পিছনে)

*ইগনিসনঃ ডিজিটাল ইসিও বেইসড

*ব্যাটারিঃ ১২ ভোল্ট – ৬ অ্যাম্পিয়ার

*হেডলাইটঃ ১২ ভি ৬০/৫৫ ডাব্লিউ এইচ ৪

হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর এর আকারঃ  

*দৈর্ঘ্য X প্রস্থ X উচ্চতাঃ ২০০০ X ৮২৫ X ১১২০ মিলিমিটার

*চাকার দৈর্ঘ্যঃ ১৩০৫ মিলিমিটার

*গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সঃ ১৯০ মিলিমিটার

*জ্বালানী ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতাঃ ১৩ লিটার

*মোট ওজনঃ ১৩৮ কেজি

আশা করি  হোন্ডা সিবিআর ১৫০আর খুব দ্রুত বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাবে ।

Published by Shuvo Bangla