Shares 2
Honda CB Trigger 150 ৭,০০০ কিলোমিটার রাইড - ডাঃ দীপংকর সরকার
Last updated on 26-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla
আমি ডাঃ দীপংকর সরকার, পেশায় চিকিৎসক। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকায় কর্মরত আছি। আমি এমন একটি পেশায় রয়েছি যেখানে আমাকে সময় অসময়ে বাইরে যেতে হয়। তাই মোটরসাইকেল আমার একটা প্রয়োজনীয়তা। আমি জানাবো আমার ব্যবহৃত বাইক Honda CB Trigger 150 এর ৭০০০+ কিলোমিটার ব্যবহার করার পর অভিজ্ঞতা।
Honda CB Trigger 150 ৭,০০০ কিলোমিটার রাইড - ডাঃ দীপংকর সরকার
৭০০০+ কিলোমিটার চালানো একটা বাইকের লং-টার্ম রিভিউ দেবার জন্য যথেস্ট। উল্লেখ্য আমি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকেই বাইক চালানো শুরু করি। বিভিন্ন ধরণের বাইক চালালেও এই Honda CB Trigger 150 বাইকটিই আমার প্রথম নিজস্ব বাইক। ছোটো বেলায় ক্লাস টু তে পড়ার সময় প্রথম বাইক কিনতে যাই বড় কাকার সাথে সেটা ছিলো বগুড়ায় হোন্ডা প্যালেস নামক একটা বাইকের দোকানে। বলতে গেলে তখন থেকেই বাইকের প্রতি ভালোবাসার শুরু। বড় কাকা আমাকে খুবই ভালোবাসে, তাই আমার পছন্দে তখন লাল রংয়ের Honda CD80 কিনে বগুড়া থেকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় নিয়ে আসি। সেটা ১৯৯২ সালে যখন গাইবান্ধায় বাইকের কোনো শোরুম ছিলো না। আমিও কিন্তু আমার প্রথম বাইক কেনার সময় বড় কাকাকে সাথে নিয়ে যাই এবং তিনি খুবই খুশি হন। আমাদের বাড়ির পাশের রাজু চাচার Honda H100S সিলভার কালারের বাইকের টান এবং সাউন্ড আমি আজও শুনতে পাই, যেটাতে চড়ে অসুস্থ অবস্থায় কয়েকবার ডাক্তার দেখাতে গিয়েছি। এভাবেই ধীরে ধীরে বাইকের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে ওঠে এবং আমি স্বপ্ন দেখি একটা নিজের বাইকের।
এরপর বড় হয়ে চাকরিতে ঢুকে পড়ি, সংসার জীবন শুরু হয়, বাচ্চাও হয় একটা। অনেকদিন পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হাতে কিছু টাকা জমে একটা বাইক কেনার। তখন চাকরি করি গাইবান্ধায়, আবার মার্চে চলে আসতে হবে ঢাকায়। তাই তাড়াতাড়ি নতুন বাইক কেনা দরকার যাতে ২ মাস গ্রামের রাস্তায় হাত পাকাতে পারি। কারণ ঢাকায় গিয়ে জ্যাম ও কঠিন পরিস্থিতিতে বাইক চালাতে হবে। বাইক কেনার আগে ইন্টারনেটে ঘাটতে থাকি যে কোনটা ভালো হবে। শুভ্র সেন দাদার একটা ভিডিও দেখি নতুন বাইক কেনার উপরে যেটা আমার নতুন বাইক কিনতে খুবই সহায়ক হয়। একজন কলিগের পরামর্শে BikeBD এর ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করি। প্রথমেই আমার বাজেট ঠিক করি মোট ২ লাখ টাকা; যার মধ্যে বাইক, রেজিষ্ট্রেশন, ২টা হেলমেটের বাজেট ধরা ছিলো।
কয়েকটি ফ্যাক্টর চিন্তা করিঃ
- বাইকের দাম ১,৮০,০০০ কিন্তু পছন্দসই হলে আরও বাজেট বাড়ানো যাবে
- বউ-বাচ্চা নিয়ে চালানো যাবে
- আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির জন্য সুইটেবল ও কম সিট হাইটের
- ভালো ব্র্যান্ড
- ১৫০-১৬৫ সিসি এর মধ্যে
- চিকিৎসক পেশা, সরকারি ১ম ম্রেণীর কর্মকর্তা ও ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই
- বউয়ের পছন্দ
সব ঘেটে-ঘুটে কয়েকটা বাইক শর্ট লিস্টে আসে যেমন Honda CB Hornet 160R, Honda CB Trigger 150, Bajaj pulsar UG4.5 ও UG5, Suzuki Gixxer 155, TVS Apache RTR 4V. লিস্টের সবগুলো বাইকই টেস্ট রাইড ও বউ-বাচ্চা বসিয়ে ট্রায়াল দেই৷ অবশেষে বাজেট, ফ্যামিলি বসিয়ে কমফোর্ট, টেস্ট রাইড রেজাল্ট, সিট হাইট ও সিটিং পজিশন এবং সর্বোপরি বউয়ের পছন্দ মিলে Honda CB Trigger 150 কে আমার জন্য সবচেয়ে ভালো মনে হয়েছে। Suzuki Gixxer কে অনেক পছন্দ হবার পরও যখন বউ-বাচ্চা নিয়ে বসার চেস্টা করি তখন বাধ্য হই সেটাকে বাদ দিতে, তাছাড়া তখন আবার ট্রিগারের চেয়ে প্রায় ৫০,০০০ টাকা বেশি লাগবে। এভাবেই আমার কাঙ্খিত বাইক Honda CB Trigger কে পছন্দ করি। আর সেই সাথে সবচেয়ে পছন্দের ব্রান্ড Honda এর বাইক বলে কথা।
এরপর বাইক কিনতে গেলাম হোন্ডার গাইবান্ধা শহরের শোরুমে; সোমেসী ট্রেডার্ড, গাইবান্ধা। কিন্তু শোরুমে গিয়ে বাধলো বিপত্তি। গিয়ে দেখি Trigger এর Single Disc ও Double disc দুই ধরণের বাইক আছে। Double disc নিতে গেলে আরও প্রায় ৩০ হাজার লাগবে; কিন্তু শুধুমাত্র পিছনের ডিস্কের জন্য এতো টাকা অনেক বেশি অতিরিক্ত মনে হলো, ১০ হাজার পর্যন্ত বেশি হলেও নিতাম। বাইকের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১,৭১,০০০ টাকা হলেও শোরুমের মালিক ১,০০০ টাকা অনার করলেন, কোনো প্রকার ভ্যাটের টাকাও দাবী করেন নাই।
অবশেষে ১,৭০,০০০ টাকায় Honda CB Trigger 150 বাইকটির ক্রয় সম্পন্ন হলো ২০১৯ সালের ৭ ই ফেব্রুয়ারি। বাইক কেনার দিন দুপুরে বাবা-মাকে বললাম গ্রাম থেকে আমার সাথে বাইক কিনতে যেতে। কিন্তু তারা ব্যস্ততার কারণে যেতে পারলেন না। তাই বউ-ছোট্ট ছেলে, ছোটো ভাই ও একজন জেঠাতো ভাইসহ গ্রাম থেকে গাইবান্ধা শহরে গেলাম বাইক কিনতে বিকেল ৩টায়। আমার বড় চাচা যিনি শহরেই থাকেন, তাকে সাথে নিলাম, সাথে চাচাতো বোনের স্বামীও যোগ দিলো। তারপর চলে গেলাম হোন্ডার শোরুমে। ১ ঘন্টার ভিতরে বাইক রেডি হয়ে গেলো। শোরুমের মালিক ১ লিটারের জায়গায় ২ লিটার অকটেন দিলেন।
এবার বাইককে প্রথম স্টার্ট দিলাম। অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করলো। বউকে পিছে নিয়ে চলে গেলাম মন্দিরে পুজো দিতে। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় মন্দির থেকে রওনা দিয়ে সোজা বাড়িতে। পিলিয়ন হিসেবে ছোট্ট ছেলে ও বউ। বাইকটাকে গ্রামের বাড়িতে আনার পর সেটাকে ঘিরে ছোটোখাটো উৎসব শুরু হয়ে গেলো।
বাইকটা নিয়ে প্রতিদিন অফিস যাই, ছোটো দুরত্বের ট্যুর, ঢাকার ভিতরে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘোড়াঘুড়ি, সপ্তাহে ২ দিন মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যবসার কাজে যাতায়াত করি। মূলত দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্যই বাইকটি ক্রয় করেছি। ফিচার হিসেবে Honda CB Trigger 150 একটি কমিউটার বাইক, তাই এটা থেকে স্পোর্টস বাইকের পারফরমেন্স আশা করা অনুচিত। কমিউটার হিসেবে এটা এক কথায় অসাধার। বাইকটি ১৫০ সিসির সিঙ্গেল সিলিন্ডার এর ইঞ্জিন যা প্রায় ১৪ হর্স পাওয়ার উৎপন্ন করে। রয়েছে সামনে-পিছনে টিউলেস টায়ার, রেয়ার মনোশক সাসপেনশন, আপ রাইট হ্যান্ডেলবার, ফুল ডিজিটাল মিটার। প্রায় প্রতিদিনই বাইকটা কম-বেশি চালানো হয়, চালানোর অনুভুতি ভালোই। কোনোদিন হতাশ করে নাই বা রাস্তায় কোনো কারণে বসে যায় নাই আজ পর্যন্ত। সার্ভিসিং এখন পর্যন্ত ৪ বার করানো হয়েছে এবং প্রত্যেকবারই হোন্ডার সার্ভিস সেন্টার থেকে সার্ভিস করিয়েছি।
বাইকটি ১৫০ সিসি সেগমেন্টে সেরা মাইলেজ দেয়। কেনার পর থেকেই এখন পর্যন্ত সিটিতে ৪২+ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৫০+ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ দিয়ে যাচ্ছে। ব্রেক ইন পিরিয়ড ভালো ভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে। যথাসময়ে সার্ভিসিং, ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে গত ৬ মাস সার্ভিসিং করানো হয়নি কারণ পারফরমেন্সে কোনো ঘাটতি দেখা দেয়নি। তাই করোনা পরিস্থিতিতে রিস্ক নিচ্ছি না। প্রথম ৫০০০ কিলোমিটার হোন্ডা ব্র্যান্ডের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি এবং তারপর Repsol ফুল সিনথেটিক ব্যবহার করছি। CB Trigger এর ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড 10W30। বাইকটির মেইনটেনেন্স খরচ খুবই কম। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র এয়ার ফিল্টার ছাড়া আর কিছুই পরিবর্তন করি নাই; আসলে কোনো পার্টস পরিবর্তন করতে হয় নাই। বাইকে শুধুমাত্র ২ টা স্টিকার লাগানো ছাড়া আর কোনোকিছু মোডিফাই করি নাই।
এবার আসি বাইকের টপস্পিড। আমি Honda CB trigger এ টপস্পিড পেয়েছি সিঙ্গেল রাইডে ঘন্টায় ১১৮ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত এবং পিলিয়নসহ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১২ কিলোমিটার। আমি মনে করি একটা কমিউটার বাইক হিসেবে এটা যথেস্ট।
Honda CB Triggerএর ৫ টি ভালো দিকঃ
- বাইকটির স্মুথ ও লো মেইনটেনেন্স ইঞ্জিন
- বাইকটির সিটিং পজিশন, এক কথায় খুবই আরামদায়
- বাইকটির মাইলেজ
- বাইকটির পিলিয়ন কম্ফোর্ট, পিলিয়ন হিসেবে রাইড করে কেউ অসন্তুষ্ট হয়নি
- ওভারঅল ডিসেন্ট লুকস ও বিল্ড কোয়ালিট।
Honda CB trigger এর ৫ টি খারাপ দিকঃ
- হেড লাইটের আলো এক কথায় জঘন্য
- বাইকটিতে ছোটো-খাটো ব্যাগ নেবার হুক লাগানো কঠিন
- সুইচ গিয়ার নিম্ন মানের, বৃস্টিতে ভিজলেই পাস সুইচ কাজ করতে চায় না
- রেডি পিকআপ খুবই কম
- ৬৫-৭৫ স্পিড রেঞ্জে ও ১০০+ স্পিড রেঞ্জে কিছুটা ভাইব্রেশন পাওয়া যায়
বাইকটি দিয়ে লং ট্যুর তেমন করা হয়নি। একবার শুধু ২০০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গিয়েছি। তাতে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা থাকলেও কোন রুপ সমস্যা হয়নি। কখনোই কোন রুপ সমস্যা, ব্যাক পেইন, হাতে-কাধে ব্যাথা হয়নি। পরিশেষে বলবো দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য Honda CB Trigger 150 এক কথায় সুপার কমিউটার। তবে হাইওয়েতে অন্যান্য বাইক যে আপনাকে মুড়ির মতো ওভারটেক করে যাবে তা কিন্তু নয়। ১৫০-১৬৫ সিসির সমসাময়িক বাইকের সাথে ভালো ফাইট দিতে পারবেন। মোটামুটি সব বয়সের সাথে বাইকটা চলে। অনেকে বলবে লুক ভালো না, কিন্তু বাস্তবতা হতে লুক খারাপও না। লং ট্যুরও অনেকেই দিছে যারা ভালো রিভিউ দেয়। সবচেয়ে বড় কথা এটা Honda Bikes; আর বাইকের জগতে Honda is Honda। ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ ডাঃ দীপংকর সরকার
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Raihan Opu Bangla