Honda CB Hornet 160R ১৬,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - সবুজ
Last updated on 01-Aug-2024 , By Shuvo Bangla
আমার নাম মোঃ সবুজ মিয়া । আমার বয়স ৩৫ বছর। ঠিকানা বেলাব, নরসিংদী। আজ আপনাদের সাথে আমার Honda CB Hornet 160R বাইকের রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
আমার জীবনের প্রথম বাইক ছিল Honda CD80 ২০০৬ সালে । এই বাইকটি দিয়েই আমি মূলত বাইক চালানো শিখেছিলাম। এরপরে ২০১৪ সালে TVS Apache RTR 150cc বাইক। বর্তমানে আমি Honda Hornet 160R বাইকটি ব্যবহার করছি। আজ আমার এই বাইকটির ব্যাপারে আপনাদের সাথে বিশেষ অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
বাইক চালানো শিখেছি আমার বড় ভাই,জনাব শাহজাহান সিরাজের হাত ধরে। তখন Honda 80cc বাইক দিয়ে ভালোভাবে বাইক চালানো শিখতে সময় লাগে মাত্র ০৫ দিন। কিছু দিন পর অর্থাৎ ২০১৩ সালে আমার বড় ভাই Runner Royal Plus 110cc মোটর বাইক ক্রয় করে। আর তখন আমার খুব আনন্দ লাগে। বাইকটি লাল কালারের ছিল।
বাইকটি সিংঙ্গেল ডিস্ক ব্রেক, ডিজিটাল মিটার আছে বাইকটিতে। আর তা দেখে আমার অনেক ভালো লাগে, কারণ এই অল্প দামের মধ্যে ফিচার গুলো অনেক বেশি ছিল। আমার ভাইয়ের বাইক দেখে আমারও বাইক কেনার শখ জাগে, সিদ্বান্ত নিলাম বাইক কিনবই, তাই আমি ২০১৪ সালে লোন করে, বন্ধুদের থেকে ধার করে, বড় ভাইয়ের থেকে ধার করে আমার জমানো সঞ্চয় ছিল সব টাকা মিলিয়ে TVS Apache RTR 150cc লাল কালারের বাইকটি ক্রয় করি।
রয়েল এন্টারপ্রাইজ মগবাজার ঢাকা থেকে। ঐ সময় বাইকের দাম + রেজিঃ ১০ বছর + বাইকের ডেকোরেশন সহ দুই লক্ষ পচিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল আমার। আর বাইকের মূল্য থেকে ২,০০০/- দুই হাজার টাকা ডিসকাউন্ট দিয়েছিল শোরুম। ধন্যবাদ শোরুম কে। ঐ শোরুমের ম্যানেজার সুজন ভাই সে একজন ভালো মনের মানুষ। আমি যখন ফোন দিলাম বাইক নেওয়ার জন্য, বললাম আমার জন্য বাইক নিবো। তখন বললেন চলে আসেন। তখন আমি চলে গেলাম তাঁর শোরুমে, তখন খুব আনন্দ পাই নতুন বাইক কিনব বলে। দ্রুত চলে গেলাম তাঁর শোরুম মগবাজারে।
তারপর TVS Apache RTR 150cc বাইকটি দুই বছর চালিয়ে ২০১৭ সালের দিকে কিছু আর্থিক সমস্যার কারণে বাইকটি সেল করতে হয়ে ছিল। তখন আমার কলিজায় দাগ কেটে ছিল যে, এত কস্ট করে বাইকটি কিনলাম, আর এখন বিপদে পড়ে বাইকটি বিক্রি করতে হলো। যাই হোক আল্লাহ পাক ভাগ্যে হয়তো আরও ভালো কিছু রেখেছেন, এই ভেবে আর মন খারাপ করিনি।
তারপর ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আমি এই বাইকটি ক্রয় করি, হোন্ডা শোরুম পল্টন থেকে। বাইকটি ভালো লাগার প্রথম কারন হলো, জাপানি ব্র্যান্ড। এ বাইকের সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিল আমার কাছে, তার পিছনের ১৪০/ ৭০ সেকশনের টায়ার দেখে। বাইকটি বেশী দিন হয়নি তখন বাজারে আসছে। এ বিষয়টি খুব ভালো লাগে আমার।
আমি একটা চাকুরি করি। সবদিক বিবেচনা করে আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলার পর, ভাই বললো বাইকটি খুব ভালো হবে। আর তখন ইউটিউবে এই বাইকের রিভিউ দেখতাম প্রতিদিন। এই চিন্তা ভাবনা করে দুজন হোন্ডা শোরুমে চলে গেলাম। আর ক্রয় করলাম স্বপ্নের বাইকটি। ঐ সময় তার মূল্য ছিল একলক্ষ উননব্বই হাজার নয়শত টাকা।
বাইকের সাথে একটি হেলমেট ফ্রি দিয়েছিল শোরুম থেকে। ঐ শোরুমের লোকজন গুলো অত্যন্ত ভালো ছিল। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার বাইকের নাম্বার হয়েছিল মাত্র দুই কর্ম দিবসে। আর এ বাইকের মোট খরচ হলো বাইক ক্রয় বাবদ ১,৮৯,৯০০+ দুই বছরের রেজিঃ ১৬,০০০+ ডেকোরেশন বাবদ ৫,০০০ মোট দুই লক্ষ দশ হাজার নয়শত টাকা মাত্র।
প্রধানত বাইক দিয়ে দেশের সকল সুন্দর্য মন্ডিত জায়গা গুলো খুব কাছাকাছি থেকে উপভোগ করা যায়। এবং যেখানে সেখানে দিব্বি যাতায়াত করা যায়। যা আর কোন যানবাহন দিয়ে কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই বাইক রাইডিং আমি অনেক ভালবাসি। এবং আজীবন বাইক রাইডিংয়ের সাথেই থাকতে চাই।
হোন্ডা হরনেট বাইকটি যখন ইন্ডিয়া এবং পরে বাংলাদেশের বাজারে প্রথম দেখলাম। তখন থেকেই আমি তার ভক্ত হয়ে গেলাম। হোন্ডা হরনেট ১৬০সিসি বাইকটির কালার, লুক, ডিজাইন, এবং পার্ফমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। এ বাইকের ব্রেকটা যে, কি মজার এটা যারা ব্যাবহার করেছে শুধু তারাই জানে। প্রতিদিন আমি যখন বাইকটি রাইড করি, আমার কাছে মনে মনে হয়, এই সেগমেন্টের মধ্যে সেরা একটি বাইক চালাচ্ছি।
বাইকটি প্রথম বার, দ্বিতীয় বার হোন্ডা সার্ভিস সেন্টার থেকেই সার্ভিস করিয়েছিলাম। বাকি সার্ভিস গুলো করাইনি। সার্ভিস সেন্টারের কারিগরি দক্ষতা অসাধারন। ৯,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পেতাম ৪৮ থেকে ৫২ প্রতি লিটারে, চালানোর প্রকার ভেদে। ৯,০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর, প্রতি লিটারে ৪২ থেকে ৪৫ প্রতি লিটারে মাইলেজ পাচ্ছি এখন।
প্রথম থেকেই Honda 10w - 30 গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি , সবসময় শোরুম থেকে পরিবর্তন করি। তারপর একবার Shel 20w40 বাহিরের দোকান থেকে কিনে পরিবর্তন করেছিলাম। এই ইঞ্জন অয়েল ব্যাবহার করার পর আমার বাইকের ইঞ্জিনে অনেক সমস্যা হচ্ছে মনে হলো। তারপর আমি আর দেরি না করে শোরুম থেকে আবার Honda 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করা শুরু করি। এরপর আমার বাইক ভালো ভাবে চলা শুরু করল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমি Honda 10w30 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করছি, এর দাম আগে নিতো ৪৫০ টাকা। আর এখন দাম নিচ্ছে প্রায় ৬০০ টাকা। ১,২০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাইড করি এক ইঞ্জিন অয়েল এ।
এয়ার ফিল্টার ১ম বার ১০,০০০ কিলোমিটার চালিয়ে চেঞ্জ করি। তারপর ২য় বার ৫,০০০ কিলোমিটার চালিয়ে চেঞ্জ করি। আমার বাইকে ইয়ামাহা ফেজার ভার্সন ২ এর উইনসিট ইন্সটল করি। পেছনের চাকার মাডগাট ইন্সটল করি। এলইডি হেড লাইট এবং এল ই ডি ফগ লাইট দুই সেট প্যাসিফিক ৭ এস ইন্সটল করি। এলইডি পার্কিং লাইট, এবং ব্লু কালারের ইঞ্জিন লাইট ইন্সটল করি, বাম পাশের পা দানি ইন্সটল করি, সাইলেন্সারের সারিগাড ইন্সটল করি ।
বাইকটিতে আমি ১২২ স্পিড তুলতে পেরেছি সিঙ্গেল অবস্থায়। এক্সেলেটরের গতি আরও আছে মনে হয়েছে।
Honda CB Hornet 160R বাইকটির কিছু খারাপ দিকের কথা বলি -
সাসপেনশন মোটামুটি মানের।
পিলিয়ন সিটে বসে বেশি মজা নাই।
হেড লাইটের আলো খুবই কম।
বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি আরো ভালো হওয়া দরকার ছিল। বডি কিট দূর্বল মনে হয়।
Honda CB Hornet 160R বাইকটির কিছু ভালো দিকের কথা বলি -
বাইকের লুকটা অসাধারণ নজর কারা।
বডি কালার, ডিজাইন অনেক ভালো।
টপ স্পিডে রেডি পিকাপ আছে।
কন্ট্রোলিং অনেক অনেক ভালো।
মাইলেজে আমি সন্তুষ্ট।
বাইকটি দিয়ে আমি সিলেট মাজার জিয়ারত করি নয়বার। বিছানা কান্দি দুই বার, সাদা পাথর তিনবার, শ্রীমঙ্গল দুইবার, জাফলং দুইবার,মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও জাদুঘর, পানাম নগর সিটি, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, ঢাকা সিটি, মুন্সিগঞ্জ, নিজ জেলা নরসিংদী সহ আরো অনেক নাম না জানা জায়গায় ভ্রমণ করি।
১৬,০০০ হাজার কিলোমিটার রাইডের মধ্যে একবারও ফুল সার্ভিস করিনি। যদি কোন টুকটাক সমস্যা হয় তাহলে আমার এলাকার দক্ষ একজন বাইক মেকানিক আছে মোঃ আল আমিন, এর কাছ থেকে সমাধান করি। তার একটি ভালো দিক হলো সে বাইকের ওয়ারিং এর কাজ খুব ভালো পারে। ঠিকানা বারৈচা বাজার,বেলাবো, নরসিংদী। ঢাকা সিলেট হাইওয়ে রোড, পেট্রোল পাম্প এর বিপরীত পাশে।
বাইকটির ব্যাপারে আমার অলমোস্ট কোন অভিযোগ নেই। বাইকটির পারফরম্যান্সে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাইকটি ০৪ বছর ০১ মাসে ১৬ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ সকল বাইকার ও বাইক কমিউনিটিকে। বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ বাইকবিডি কে। বাইক মানেই বাইকবিডি।
লিখেছেনঃ মোঃ সবুজ মিয়া
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।