Shares 2

Haojue TR 150 ৫০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - মাশুক উল হক

Last updated on 18-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla

আমি মাশুক উল হক। বর্তমানে Haojue TR 150 বাইকটি রাইড করছি। বাইকটি ক্রুজার সেগমেন্টের বাইক। আমি ও আমার এক বন্ধু দুজনে এক সাথে বাইক কিনেছিলাম। আমি প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার এবং বন্ধু ১০,০০০ কিলোমিটার রাইড করা হয়েছে। আমরা ঢাকা -ফেনী-ঢাকা (ডে নাইট), ঢাকা-চট্টগ্রাম- ঢাকা (ডে নাইট) এবং লক ডাউনের আগে মাওয়া রোড হয়ে ভাগ্যকুল পর্যন্ত গিয়েছি এক সাথে।

বাইকটির কিছু ভাল দিক তুলে ধরছিঃ

Haojue TR 150

আমার বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে খুবই খুতখুতে স্বভাবের । এইটার আগে সে দুইটা এফজেড (ভিটু) কিনে পরপর বেচে দিল, হোন্ডা সিবি হর্নেটে এ তার সমস্যা ছিল। ইঞ্জিন ট্যাপেট বারে বারে লুজ হয়ে যায়। ৬০০০ কিলোমিটার এ ক্যাম বদলাতে হয়েছিল বাইকটি। 

তাছাড়া ব্যাটারি ও সাপোর্ট ভাল দেয় না। ফগ লাইট জ্বালিয়ে রাখলে দুই ঘন্টায় ব্যাটারি চার্জ শেষ। মিটারের বাতি পর্যন্ত জ্বলে না। প্রথমে একটু টেনশনে ছিলাম যে চায়না বাইকের উপর ভরসা করা যাবে কিনা। কিন্তু পাচটা ইয়ামাহা ব্যবহারের পরে Haojue TR 150 এর প্রতি ভরসা দিন দিন বাড়ছে । দেখতে একটু ছোট লাগলেও এর ওজন ১৪৮ কেজি। ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী, ভাংগা উচু নিচু এমনকি তিন চার থাক সিড়ি বেয়ে অনায়াসে টুকটুক করে উঠে যায় যেখানে আমার ব্যবহার করা ইয়ামাহা প্রথম ভার্সন ফেজারের ইঞ্জিন আর্তনাদ করত। Haojue TR 150 চালালে মনে হয় যেন ২০০ সিসি চালাচ্ছি। আমার পরামর্শে আমার বন্ধুটি Haojue TR 150 ক্রয় করে। এখনও সে বাইকটি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট।

১) Haojue TR 150 এর ইঞ্জিন সাউন্ড খুব স্মুথ। কোন ভাইব্রেশন করে না ফুল স্পিডে। ২) থ্রটল রেসপন্স চমৎকার। শক্তিশালী ইঞ্জিনের একটা ফিল পাওয়া যায়। গিয়ার রেশিও বড় হবার কারণে শুরুতেই শক্তি নিয়ে দৌড়ায়। তবে টপ স্পিড কমে যায়। বাইকটির টপ ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। 

অবশ্য ক্রুজার বাইকে টপ এরকমই হয়। ৩) চমৎকার বিল্ড এবং রং এর কোয়ালিটি। ৪) এটার ইলেক্টিক্যাল ওয়ারিং (তার) খুব ভাল যা আমার মেকানিক ( তোফাজ্জল, গিয়ার আপ, বিজয় স্বরণী) ফগলাইট এবং ইমারজেন্সি লাইট এর কানেকশন দিতে গিয়ে বলেছে। অবশ্য আমি নিজেই ওর আগে দেখেছি। ৫) দূর্দান্ত ব্যাটারী সাপোর্ট। সারা রাত রাইড দিলাম ফগ লাইট জ্বালিয়ে, জোড়া হর্নের আওয়াজ একটুও কমে নাই । কোয়ারেন্টাইনেও পাচ সাতদিনে একবার স্টার্ট দেই সেল্ফ দিয়েই। এই বাইকে ব্যাটারী দূর্বল হলে এবং ইন্জিন ওয়েল পরিবর্তনের সময় সেট করে নিলে মিটারে সাইন ওঠে। লো ব্যাটারি সাইন শুধু কেনার পর স্টার্ট করার সময় দেখেছিলাম। হয়ত চালানো হয়নি তাই শো করেছিল।

৬) কন্ট্রোলিং/ব্যালেন্স অসাধারণ। কর্ণারিং এ আলাদা কনফিডেন্স পাই ফেজারের মত। (আমি একটা ফেজার ২০১২ মডেল, ৫০,০০০ এর বেশি চালিয়েছি)। এইটা দুই তিন কিলোমিটার গতিতেও পা না নামিয়ে ঘুরানো যায়। পড়ে যাব এমন অনভূতিই হয় না। ৭) ১৪৮ কেজি ওজনের ভারি বাইক মাটি আকড়ে চলে। পিছনের চাকা কাদামাটিও পিছলায় না। অবশ্য আমার বন্ধুর বাইকটি স্লিপ করেছিল, পড়ে নাই। কারণ চাকায় হাওয়া বেশি ছিল।

৮) বাইকটিতে দেয়া হয়ছে TSR ইঞ্জিন। valve clearance adjustment করার ঝামেলা নাই। তেল ভরা , মোবিল আর এয়ার ফিল্টার সময়মত বদলে নিলেই চলবে। ৯) ওভার হিটিং ইস্যু নাই। সারাদিনে ৫০০ কিলোর মত চালিয়েও ইঞ্জিন ওভারহিট বা পারফরমেন্স লস করার মত কিছু পাই নাই। বরাবরই আমি ইয়ামাহা লাভার , বেশ কয়েকটা ইয়ামাহা দিয়ে হাইওয়েতে অনেক লম্বা রাইড করেছি। 

Also Read: সর্বশেষ ক্রুজার বাইক নিউজ বাংলাদেশ

TR চালিয়ে কোন পার্থক্য পাই নাই পারফরমেন্স এ। চায়না বাইক এর ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণাই বদলে দিয়েছে হাউজি। ১০) মাইলেজ । অনেকের কাছেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমিও ব্যাতিক্রম নই।তেল বেশি খায় না এইটা। আমরা অনেকি মূখস্ত বলে দেই যে অমুক বাইক তেল বেশি খায়, তমুক বাইক কম। আসলে বিষয়টা ইউজারের উপর নির্ভরশীল। এই যুগে কোন বাইকই তেল বেশি খেলে মার্কেট পাবে না। হাওজু টিআর ও তেল বেশি খায় না। আনুমানিক ৪০ এর বেশি যায় যখন দ্রুত গিয়ার সিফট করে টপ গিয়ারে চালানো হয়।   

তেল যাতে কম খায় সেজন্যে সকল বাইকে একই নিয়মঃ

  • পরিস্কার এয়ারফিল্টার
  • প্লাগ পরিষ্কার এবং গ্যাপ সঠিক রাখা
  • টায়ার প্রেশার সঠিক রাখা
  • ইন্জিন টিউনিং, ভ্যালব ক্লিয়ারেন্স সঠিক থাকা
  • চেইন টেনশন সঠিক থাকা
  • তেলের মান ভাল হওয়া
  • টপ গিয়ার লো আরপিএম এ বাইক চালানো
  • ইন্জিন ওয়েল/ফিল্টার সঠিক অবস্থায় থাকা

হাওজু টিআর এর থ্রটল এমন এক জিনিশ যাকে যত বেশি মোচরাবেন ইন্জিন তত বেশি খাবে। দুই পাশের বক্স গুলা পানি নিরোধক এবং বেশ মজবুত। রিক্সা সিএনজি ওয়ালা ইতিমধ্যে আঘাত করেছে। ভেবছি ভেংগেই গেছে, চেক করে দেখলাম কিছু হয় নাই। এখন পর্যন্ত যেইটা বিরক্তির কারণ তা হল চেইনের কোয়ালিটি ভাল না। লুজ হয় বেশি। দশ হাজারে গিয়ে চেইনটা বদলে নিব। তবে পার্সটের দাম রিজনাবল। ব্রেক সু, এয়ারফিল্টার ইত্যাদি ইন্ডিয়ান বাইকের মতই দাম। Haojue TR 150 এর ব্যাটারি এবং ইলেক্ট্রিক তার খুব ভাল। 

যা কিনা আজ পর্যন্ত আমি জাপানি ছাড়া কোন মোটরসাইকেলে দেখি নাই । সারারাত ফগলাইট জ্বালিয়ে রাখলাম অথচ ব্যাটারি কোন সমস্যাই করে নাই। ব্যালেন্স কন্ট্রোলিং এর কথা নাই বা বললাম।   

লিখেছেনঃ মাশুক উল হক   

আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Ashik Mahmud Bangla