Shares 2
Freedom Runner Kite স্কুটার নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা
Last updated on 04-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
বেশ কয়েকদিন আগে আমি আমার পোস্টটা করেছিলাম একটা সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনে কাগজপত্রের নাম ট্রান্সফারের ব্যাপারে সাজেশন চেয়ে... অভিজ্ঞদের কাছ থেকে মন্তব্য পেয়ে মনে হয়েছিলো কাজটা বেশ ঝামেলার হবে আর তাছাড়া সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকের বিভিন্ন সমস্যা তো আমি বুঝবো ও না কারন আমি একদমই নতুন...
Freedom Runner Kite স্কুটার নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা
আমি সাইকেল চালাই... ঢাকা শহরে সাইকেলের স্পীডই আমার কাছে অনেক মনে হয়... কিন্তু সমস্যা হলো সাইকেলের প্যাডেল মেরে একটু দুরের কোথাও কোন কাজে গেলে সেখানে যাওয়ার পরে আর এনার্জি থাকে না... অনেক বেশী ক্লান্ত লাগে... অল্প দূরত্বের জন্যে সাইকেল পারফেক্ট বলে আমি মনে করি... যাই হোক, অনেক ইজিভাবে চালানো যায় এমন ইঞ্জিনওয়ালা দুই চাকার একটা বাহন আমার দরকার ছিলো ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্যে... প্রথমেই মাথায় আসলো ব্যাটারী চালিত বাইকের কথা... কিন্তু ব্যাটারী চালিত বাইকের ক্ষেত্রে আমার যে প্রবলেম মনে হয়েছিলো সেটা হলো-
১. মাঝরাস্তায় হুট করে চার্জ শেষ হয়ে গেলে কী হবে? হিসেব করে কখনো রাস্তায় বের হওয়া যায় না... জানি ওগুলো ফুল চার্জে ষাট কিলোমিটারের মতো চলে কিন্তু আমি যদি কখনো এক জায়গার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আরো কয়েক জায়গায় যাই?
২. ব্যাটারী চালিত বাইক ফুল চার্জ হতে নাকি দশ টাকার মতো বিল উঠে... খরচ নাকি একদমই নাই কিন্তু ওইসব বাইকের ব্যাটারী যে দেড় বছর পর পর চেঞ্জ করতে হয় এটা কিন্তু অনেকেরই মাথায় থাকে না... চারটা ব্যাটারী চেঞ্জ করতে বিশ হাজার টাকা লাগবে... আমি প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার টাকার তেল খরচের হিসেব করলে বিশ হাজার টাকার তেলে আমি দুই বছর চলতে পারবো... আর হঠাৎ কোনদিন একটু বেশী ঘোরাঘূরি করলেও তো চিন্তাহীন ভাবেই চলাফেরা করা যাবে তেলের বাইকে...
৩. আমার ভার্সিটির পার্কিং বেসমেন্ট এতই ঢালু যে ব্যাটারী চালিত বাইকের ওই ঢালু জায়গা টুকুন উঠতেই অর্ধেক চার্জ ফুরিয়ে যাবে...
একদম অটো গিয়ারের স্কুটিগুলো কেনার দিকে মন দিলাম... TVS wego, Hero pleasure এইসব দেখলাম... এগুলোর দাম অনেক বেশী এবং সেই সাথে মাইলেজও কম... দেড় লাখ টাকা দাম আর লিটারে নাকি পঁয়ত্রিশ করে যায় ... আবার হোন্ডার ফিফিটি সিসির রিকন্ডিশন গাড়ীগুলোরও দাম বেশী... ইন্টারনেটে অনেক গবেষনার পরে এরপর একদম সাধ্যের মধ্যে কম তেল খরচ হবে এমন একটা বাইকের উপর চোখ পড়লো... রানার কোম্পানীর ফ্রিডম কাইট!( আমি এ্যাডভারটাইজমেন্ট করছি না অসুবিধাও বলবো একটু পরে...:P) এই বাইকের দাম ৬৮ হাজার টাকা... একদম হোন্ডা সুপার কাব ফিফটি সিসির মতো তবে এটা একশ সিসির বাইক এবং এর গিয়ার চারটা এবং চারটাই সামনে... কোন ক্লাচ নাই... অটো ক্লাচ...
আমি কিনলাম, ইহাকে কিনলাম! Freedom Runner Kite কেনার সময় বলেছিলো লিটারে নাকি পঞ্চান্ন+ যাবে কিন্তু আমার হিসেব মতে লিটারে পঁয়ত্রিশ করে যাচ্ছে... বিষেশজ্ঞদের মতে আমি আস্তে চালাই বলেই নাকি এই অবস্থা... আমি স্পীড ভায় পাই তার উপর কাছের অনেক বন্ধু বান্ধব বাইক কেনার পরে আমার মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকায়া দিছে... ওমুকের ছোট মামা এক মায়ের এক পুত বাইক এ্যাকসিডেন্ট করে গত বছর মারা গেছে... ওমুক লোকের পা খোড়া হয়ে গেছে বাইক চালায়ে তুই সাবধানে চালাইস দোস্ত... আমি জানি আমার বন্ধু আমার ভালোর জন্যেই কথাগুলো বলেছিলো কিন্তু ওই কথাগুলোই সাইকোলজিকালি আমাকে নার্ভাস করে দেয় একটু বেশী স্পীডে চালালেই... আর তাছাড়া রানার কাইটের ব্রেকিং সিস্টেম অতটা ভালো বলে মনে হচ্ছে না আমার কাছে(দেখেছেন বদনাম করলাম! :P) গাড়ীটাও অনেক কম ওজনের(85Kg) যার ফলে স্পীড একটু বাড়ালেই গাড়ী প্রচুর হাল্কা হয়ে যায় এবং তখন সামান্য একটু এদিক ওদিকেই নিয়ন্ত্রন হারানোর সম্ভাবনা থাকে...
যাই হোক, আমি কম স্পীডেই গাড়ি চালাচ্ছি এবং চালাবো... এভারেজে 25-30Kmph... দরকার নাই আমার তেল সেইভ করার কারন ”তেলের চেয়ে জীবনের মুল্য অনেক বেশী!”
মাত্র সাতদিন হলো স্কুটারটি চালাচ্ছি... এই কম স্পীডে চালানো নিয়ে এই সাতদিনেই শুনে ফেলেছি প্রায় হাফ ডজন টিটকিরি... রিক্সা ওয়াল থেকে শুরু করে বাসের হেলপার পর্যন্ত... পেছন থেকে রিক্সাওয়ালার বিরক্তিমাখা আওয়াজ, ”কী মামা ব্যাটারীতে চার্জ নাই নাকি?” বেচারা হয়তো ভাবছে এটা ব্যাটারী চালিত বাইক... আমি যাচ্ছি একদম রাস্তার বা দিক ঘেঁষে এক বাস যাত্রী নামানোর জন্যে একদম আমার সামনে এসে ব্রেক কষলো... হেলপার তখন বলে ওস্তাদ বায়ে বড় পালসার... অনেক পালসার ওয়ালা বড়ভাই অাবার একদম পাশ দিয়ে(আরেকটু হলেই ধাক্কা লেগে পড়ে যাবো টাইপ পাশ দিয়ে যাওয়া) বুক কাঁপিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলে যায়... আমি সত্যিই জানি না পালছার কি এভাবেই চালাতে হয় নাকি আমার স্কুটারটাকে খেলনা মনে করে ওটার পাশ দিয়ে এভাবে নিয়ে যায়?... (আমার বাইক দিয়ে কিন্তু আমার মামা আশি উঠাইছিলো আমি পারি না আর পারলেও উঠাবো না নইলে দেখায়া দিতাম আমিও... হুহ!
কাগজ-পত্র!
যেই ঝামেলা এড়াতে নতুন বাইক কিনেছি সেই ঝামেলার কথা একটু শেয়ার করি... আমার বাইক যেহেতু 100 সিসির তাই এইটার কাগজ করাতে সরকারী চার্জ হলো 19663/= টাকা... কিন্তু শো রুম দিয়ে করাতে হলে লাগবে 21363/= টাকা... শো রুম ইন্সুরেন্স সহ দিবে... একদিন বিআরটিএ অফিসে গেলাম এবং টাকা জমা দেওয়ার বিশাল লাইন দেখে এবং হিডেন দালালদের হাউকাউ দেখে চলে আসলাম...শো রুমেই কিছু টাকা বেশী দিয়ে হলেও কাগজ করতে দিলাম... ব্যাংক রিসিপ্ট দিয়েই আপাতত চালাবো যেই কয়দিন নাম্বার প্লেট না আসে ওই কয়দিন... আচ্ছা এই কয়দিন কিন্তু ব্যাংক রিসিপ্ট ছাড়াই চালাইছি... গতকাল শ্যামলীতে আমার পাশ দিয়ে এক পুলিশ সার্জেন্ট তার বাইক চালাতে চালাতে জিগ্যেস করে, ”বাবা এইটা কি তেলে চলে নাকি ব্যাটারীতে চলে?” আমি বললাম- জ্বী আংকেল তেলে...( ভয়ে ভয়ে, মনে মনে, চোখ কি পকেটে নাকি? সাইলেন্সার পাইপ দেখেন না নাকি?)
পুলিশ আংকেল- "কত সিসির এইটা?" আমি- জ্বী আংকেল একশ সিসিরি... পুলিশ আংকেল- "দাম কতো নিছে?" আমি- আটষট্টি হাজার টাকা... পুলিশ আংকেল এবার বললেন- আচ্ছা আচ্ছা, তা বাবা কাগজ পত্র করতে হবে তো তাহলে এটার... আমি বললাম- জ্বী আংকেল করতে দিয়েছি... এই বলেই আমি বায়ের একটা মোড়ে ঢুকে গেলাম... দেখি পুলিশ আংকেলও সোজা চলে গেছে...
আমার বাইকটা কোথাও থামালেই মুরুব্বী শ্রেনীর লোকজন এসে এটার দাম জিগ্যেস করে এবং ভালো মন্দ মন্তব্য করে যা শুনতে ভালোই লাগে... বড়-বড় বাইক ওয়ালা ভাইয়ারা এটার সিসি জিগ্যেস করে... দুই একজন মাইলেজ জিগ্যেস করে... আর একদিন রাস্তার অপরিচিত দুইজন অতিব সুন্দ্রী বড় অাপ্পি জানতে চেয়েছে ”এই বাইক চালানো কতটা সহজ?” আমি বলে দিয়েছি- একদম পানির মতো সহজ আপু(যদিও অটো ক্লাচ বলে গিয়ার চেঞ্জ হতে চায় না সহজে... পিকআপ হুট করে ছেড়ে দিয়ে আবার গিয়ার দিতে হয় আর পিকআপ ছেড়ে দিয়ে আবার দিলে বাইক অদ্ভুতভাবে শেইক করে...) কেমন জানি ব্যাপারটা... হানড্রেড সিসিতে ক্লাচ না্ই বলেই কি এমন হচ্ছে? নাকি আমি পারছি না ঠিক মতো? হয়তো পুরোটাই হচ্ছে আমার কোন ভুলের কারনে... হয়তো চালাতে চালাতে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে...
সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন যেন আমি কোন ধরনের এ্যাকসিডেন্ট ছাড়াই স্কুটারটা চালাতে পারি... আর এটা যেন চুরি না হয়... যদিও অনেকেই বলেন যে চোররা এইসব বাইকের দিকে নজর দেয় না... তাদের নজর পালছারের দিকে... তবুও যদি কোন ছিচকে চোর নজর দিয়েই ফেলে তাহলে আমার অনেক খারাপ লাগবে কারন এই সামান্য টাকা অল্প অল্প করে জোগাড় করতেই আমার পুরো দেড় বছর লাগছে... নতুন বাইক দেখে অনেক পরিচিত বাইকাররাই চালাতে চায় কিন্তু না করতে পারি না... না করা শিখতে হবে... কীভাবে সহজে না করা শিখা যায় একটু শিখায়া দিবেন কেউ?
আর হ্যাঁ, আমি যতটা সম্ভব সাবধানে দেখে শুনে চালাচ্ছি কিন্তু আমার পাশাপাশি অন্যান্য বাইকার এবং গাড়ী চালক ভাইদেরও কিন্তু কো-অর্ডিনেশন এর দরকার আছে রাস্তায়... আমরা রাস্তায় বের হই নিজেদের কাজে যাওয়ার জন্যে কাজ শেষে বাসায় ফেরার জন্যে... একজন আরেকজনের আগে পাল্লা দিয়ে কোন পুরষ্কার জেতার জন্যে না... হয়তো কারো একটু সময় অল্প থাকে তাড়াহুড়ো বেশী থাকে কিন্তু তাই বলে আরেকজনের পাশ দিয়ে তাকে বাঝিয়ে দিতে নিয়েও না দিয়ে বরং মনের মধ্যে এক ধরনের আতংক সৃষ্টি করে দেওয়া ঠিক না... আর এত সাবধানতার পরেও কোন দুর্ঘটনা হলে বুঝে নিতে হবে সেটা কপালে ছিলো যা আমাদের কারো পক্ষেই এড়ানো সম্ভব না...
আমি গুছিয়ে লিখতে পারি না তবুও নতুন বাইক কেনার অভিজ্ঞতা এবং এর পরবর্তীকালের অভিজ্ঞতা শেয়ার না করে পারলাম না... আর দোয়াও চাওয়া হয়ে গেলো এই সুযোগে... অনেক বড় লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ... বানান ভুল থাকলে নিজ গুনে ঠিক করে পড়ে নিবেন প্লিজ!
Masudul Haq
T
Published by Shuvo Bangla