Shares 2
ডে লং ট্যুর যা কিনা সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়
Last updated on 07-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
যারা বাইক চালান অথবা যারা গাড়ি নিয়ে ছুটির দিনে ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে বের হন তারা মাঝে মাঝে কোথাও যাবার জায়গা নির্ধারণ করতে হিমশিম খান কারন সুন্দর যায়গা গুলো হয় একটু বেশী দূরে তাই তারা খোঁজ করতে থাকেন ডে লং ট্যুর যা কিনা সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়।
ডে লং ট্যুর যা কিনা সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়
এমনই এক যায়গার সন্ধান দিলেন bikebd.com এর শুভ্র সেন ... যিনি কিনা একটু ফাঁক ফোঁকর পেলে তাঁর বাইকে করে খালি সিলেট বিভাগ চলে যান, যাই হোক এক ছুটির দিনে আমি শুভ্র সেন আর অ্যাড ফ্লিমমেকার আর. ডি. অমিও রওনা হই ওই যায়গার উদ্দেশে সঙ্গী অবশ্যই আমাদের তিন বাইক।
যাইহোক যে যায়গার কথা বলছি সেটা হোল রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন।
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়র পথে এর দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। যা কিনা হাতের কাছেই। হবিগঞ্জে জেলায় বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের তিনটি বিট: কালেঙ্গা, রেমা আর ছনবাড়ী নিয়ে এই অভয়ারণ্য গঠিত।
Also Read: কক্সবাজার ট্যুর টিম সাওয়ারি - শেষ পর্ব
রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রানীর অভয়ারণ্য। এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটির আরো সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে (২০০৯) এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।
এখানে যাবার সময় রাইডাররা প্রথমে বাংলাদেশের সবচাইতে সেফ হাইওয়ে (আমার মতে) সিলেট হাইওয়ে পাবেন, তারপর চা বাগানের ভিতর দিয়ে আঁকা বাঁকা রেসিং ট্র্যাক এরপর সাপের মতো আঁকা বাঁকা রাস্তা আর সব শেষে চার কিলোমিটার এর মতো মাটির রাস্তা। মাটির রাস্তার দুই পাশে ধানক্ষেত আর তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা রাস্তাটার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে আর রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য এর ভিতর বনের মাঝে কমান্ডো থ্রিল রাস্তা তো থাকছেই।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল প্রভৃতি।
এখানে আছে একটা সুন্দর ওয়াচ টাওয়ার যেখান থেকে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত দেখা যায়। আর সব সময় খুব সুন্দর বাতাস। ভাবছি একবার ভরা পূর্ণিমা দেখতে অবশ্যয় যাবো। সুন্দরবনে পূর্ণিমা দেখার জন্য অনেক প্ল্যান এর প্রয়োজন আর খরচ এর ব্যাপার তো আছেই তারপর আবার জলদস্যুর ভয়। একটা কথা বলে রাখা ভালো এই রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য এর ভিতরে কিন্তু একটা বিজিবি ক্যাম্প আছে যার একটু সামনে ওয়াচ টাওয়ার।
এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: কুলু, রেসাস ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রানীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, বন্যশুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়।
এখানে কিন্তু এক কিলোমিটার একটা লেক আছে, আমাদের গাইডের কথা অনুযায়ী ভীষণ বড় বড় মাছ রয়েছে সেখানে। আপনারা কেউ গেলে ছিপ নিয়ে যেতে পারেন।
রওনা দিয়েছিলাম ঢাকা থেকে ভোর ৬:৩০ টায় সিলেট হাইওয়ে ধরে ৮:০০ টার সময় পৌছালাম ভৈরব।
সেখানে ভরপেট নাস্তা করলাম উজান ভাটি হোটেলে তারপর মাধবপুর বাজারের পর পুরাতন সিলেট মহাসড়ক ধরে ৯:৩০ টার দিকে পৌছালাম সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এটি বাংলাদেশের আর একটি প্রাকৃতিক উদ্যান।
ওখানে কিছু সময় কাটিয়ে গেলাম ১১:৩০ গেলাম রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য।
এরপর লাঞ্চ করতে গেলাম এক চা বাগানের বাংলোতে যেটা কিনা এই ১২৩ বছর পুরানো বাংলো দেখতে .... সেই ১৮৯০ সালে এই বাংলো তৈরি করেছিলো ইংরেজরা।
বাংলোটা ছবির মতো সুন্দর আর খুব অবাক হলাম বাংলোর ভেতর ফায়ারপ্লেস দেখে জিজ্ঞেস করার পর জানলাম আগে নাকি ভীষণ ঠাণ্ডা পড়তো যার কারনে এই ফায়ারপ্লেস। এরপর বিকেল ৩:০০ টায় চা বাগানের চা পানকরে রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। আসতে সময় লাগলো মোটামুটি চার ঘণ্টা।
June ShadiqullahFreelance photographershadiq.bfhl@gmail.com01720022002T
Published by Shuvo Bangla