Shares 2
Bajaj Pulsar AS 150 এর মালিকানা রিভিউ-জিয়া
Last updated on 03-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
শুভেচ্ছা নিবেন পাঠক। আমি জিয়াউর রহমান সিদ্দিকী। ঢাকার ধানমণ্ডিতে থাকি। আমি বাংলাদেশের অন্যতম স্টান্ট রাইডিং গ্রুপ হন্ট রাইডারজ (এইচআরজেড) এর একজন সাবেক স্টান্ট রাইডার ও প্রশাসক। বাইকবিডি’তে আমি দ্বিতীয়বারের মতো বাইক রিভিউ লিখছি। আমি বাজার পালসার এএস১৫০’র একজন গর্বিত মালিক এবং এখন আমি আমার বাইকের রিভিউ আপনাদের সঙ্গে বিনিময় করবো। শুরু করছি এর মালিকানা রিভিউ।
Bajaj Pulsar AS 150 এর মালিকানা রিভিউ
মূল বিষয় শুরু করার আগে আপনি যদি pulsar 150 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক ফ্যান পেজ ঘুরে দেখুন। তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে।
বাজাজ পালসার এএস১৫০’র ইতিকথা
Bajaj Pulsar AS 150 ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট’ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত এই সেগমেন্টের অন্যতম সেরা একটি বাইক। এর নতুন আকর্ষণীয় লুক ও ১৬.৮ হর্স পাওয়ারের শক্তিশালী ইঞ্জিন সত্যিই বাইকপ্রেমীদের রোমাঞ্চকর অনুভূতি ও চাহিদা কড়ায় গণ্ডায় পূরণ করে। গত এক দশক ধরে বাজাজ যে ডিজাইনের পালসার বাজার আনছিলো, তার চেয়ে এবারের পালসার এএস১৫০ একেবারে আলাদা ও অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট বাইকটি, যার পেরিমিটার ফ্রেম, প্রোজেকশন হেডলাইট, নতুন আকৃতির টেইল লাইট, স্পোর্টি স্প্লিট সিট, নতুন আকৃতির অ্যালয় রিম, নাইট্রক্স মনো শক অ্যাবজর্ভার রয়েছে, সেটাকে নিঃসন্দেহে পালসার এর দ্বিতীয় প্রজন্ম বলে আখ্যায়িত করা যায়।
কোয়ার্টার ফেয়ারিং করা Bajaj Pulsar AS 150 দেখতে অনেক মাচো এবং এর প্রোজেকশন হেডলাইট ও ১২ লিটারের মাসকুলার ফুয়েল ট্যাঙ্ক এর কারণে এটা দেখতে অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণী। পুরনো পালসারের চেয়ে এর টেইল লাইটও আলাদা, যার হালকা বৃত্তচাপের আকার থাকায় তা বাইকের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাইকটির শক্তিশালী ইঞ্জিন প্রত্যেক গিয়ার শিফটের সময়েই বাইকারের কাছে নিজের ক্ষমতার প্রমাণ দেয়। সত্যি বলতে কী, সর্বোচ্চ গিয়ারে যখন বাইকটি চালাচ্ছিলাম তখন বাতাসের চাপ তেমন অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারেনি। বাইকের অ্যারোডাইনামিক শেপের কারণে মনে হচ্ছিলো আমি যথেষ্ট ভালো অবস্থাতেই আছি। যারা দ্রুত ও দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে তারা অবশ্যই এই বাইকটিকে ভালোবেসে ফেলবে। কারণ এটি একাধারে শক্তিশালী, টেকসই, সাশ্রয়ী ও পিলিয়নের জন্যর আরামদায়ক।
Also read: Bajaj Pulsar 150 Twin Disc এক দিনে ৪০০ কিলোমিটার রাইড-শিশির
বাজাজ পালসার এএস১৫০– যান্ত্রিক উন্নতি
বাজার পালসার এএস১৫০’র থ্রটল রেসপন্স চমৎকার। এর ৫ স্পিড গিয়ারবক্স রয়েছে এবং ইঞ্জিন ১৪৯.৫ সিসি, সিঙ্গেল সিলিন্ডার, টুইন স্পার্ক, ৪-ভাল্ব, এয়ামর কুলড, ডিটিএস-আই ইঞ্জিন ৯৫০০ আরপিএমে ১৭ পিএস শক্তি উৎপন্ন করে। আমি এ পর্যন্ত ৪ হাজার কিমি চালিয়েছি বাইকটি এবং দেখেছি বাইকটির অ্যাক্সিলারেশন ভালো, প্রোজেকশন হেডলাইট থাকায় রাতে ভালো দেখা যায়, রাইডিং পজিশন আরামদায়ক, ভালো হ্যান্ডেলিং ও ভালো কন্ট্রোল থাকায় চালিয়ে ব্যাপক মজা পাওয়া যায়।
তাছাড়া বাইকটির জ্বালানি সাশ্রয়ও খুব ভালো একটি দিক। আমি শহরের রাস্তায় ৩৮-৪০ কিমি/লিটার ও হাইওয়েতে ৪৩-৪৫ কিমি/লিটার মাইলেজ পেয়েছি। এটা এতো শক্তিশালী একটি বাইকের জন্য যথেষ্ট ভালো মাইলেজ। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট খুব দ্রুত অ্যাক্সিলারেট করে এবং আমি সর্বোচ্চ স্পিড তুলেছি ১৩২ কিমি/ঘণ্টা।
আগের পালসারের চেয়ে এর স্পিডো ভিন্ন ধরনের। এর ডিজিটাল স্পিডো মিটার ও মাঝ বরাবর টেকো মিটার রয়েছে। যদিও এতে গিয়ার ইন্ডিকেটর নেই, তবে একটি ঘড়ি আছে এবং বামদিকে বাজাজের লোগো রয়েছে যা পুরো মিটারটিতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
আগের পালসারের চ্যাপ ব্যাকলাইট ছিলো এর অন্যতম একটি ফিচার। এই সেগমেন্টে অন্য কোনো বাইকে এমন ব্যাক লাইট ব্যবহার করা হয়নি। আগের চ্যাপ ব্যাকলাইট সাদা হলেও, এএস১৫০-তে নীল লাইট ব্যবহার করা হয়েছে, যা রাতের আধারে আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
Also read: সর্বশেষ মোটরসাইকেল তুলনামুলক রিভিউ বাইক নিউজ বাংলাদেশ
বাজাজ পালসার এএস১৫০’র কমফোর্ট জোন
এএস১৫০-তে পিছনে নাইট্রক্স মনো শক অ্যাবজর্ভার ও সামনে টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন রয়েছে। উভয় সাসপেনশনই যথেষ্ট নরম। যার ফলে বাইকটি ছোটোখাটো গর্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তায় স্মুথলিই চলতে পারে। পিছনের শক অ্যাবজর্ভারটি আবার ইচ্ছেমতো অ্যাডজাস্টও করা যায়।
এএস১৫০’র দুই চাকাতেই এমআরএফ টিউবলেস টায়ার রয়েছে। সামনের টায়ার সাইজ ৮০/১০০-১৭ এবং পিছনেরটির সাইজ ১১০/৯০-১৭, যেটা বর্তমানে প্রচলিত পালসার ১৫০’র (ইউজি ৪.৫) মতো একই মাপের। তবে আমি ভেবেছিলাম বাজাজ আরো বেশি প্রশস্ত টায়ার ব্যবহার করবে পিছনে। এএস১৫০ অনেক মাসকুলার বাইক হওয়ায় এর পিছনের টায়ারটি সে তুলনায় অনেক চিকন মনে হয়।
এএস১৫০’র সামনের চাকায় ২৪০ মিমি ডিস্ক ও পেছনে ১৩০ মিমি ড্রাম ব্রেক রয়েছে। উভয় ব্রেক একত্রে ৫০-৫০ করে ধরলে বাইকটি সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায়। আগের পালসারের হাইড্রলিক ব্রেক ‘বাইবার’-এর হলেও এবারকার ব্রেকে কোনো প্রষ্ঠিানের নাম নেই।
বাজাজ পালসার এএস১৫০’র কতিপয় নেতিবাচক দিক
বাজার পালসার এএস১৫০’র ব্রেকিং ও সামনের সাসপেনশনে কোনো পরিবর্তনই আসেনি। আমি ভেবেছিলাম এর প্রতিযোগী এফজেডএস কা জিক্সারের মতো এএস১৫০-এরও ব্রেকিং ও সামনের সাসপেনশন আপগ্রেড করা হবে। আমি নিশ্চিত যে, একটি অপশনাল এবিএস (অ্যান্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম) ও পিছনের চাকায় ডিস্ক দিলে বাইকাররা আরো বেশি খুশি হতো।
আমি অন রোড ও অফ রোড উভয় পথেই এএস১৫০ চালিয়েছি। এর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি এবং বাঁক নেওয়াও অনেক স্বাচ্ছন্দময়। ক্রুজিং কিংবা দ্রুত চলা যে কোনো ভাবেই চলার জন্য বাইকটি উপযুক্ত। তবে শহরের ট্রাফিক জ্যামে এটা টেনে নেওয়াটা কষ্টকর!
এই বাইকে তেমন কোনো নেতিবাচক দিক পাইনি, তব আমার কাছে গিয়ার পরিবর্তন করাটা স্মুথ মনে হয়নি। গিয়ার পরিবর্তন করতে অ্যাঙ্কেল দিয়ে একটু বেশি জোরে চাপ দিতে হয়। আবার কখনো কখনো গিয়ার পরিবর্তন করার সময় মাঝখানে ফেঁসে যায় এবং ইঞ্জিন থেকে ঘ্যারঘ্যার আওয়াজ হয়। এ সময় দ্রুত ক্লাচ চেপে আবার গিয়ার পরিবর্তন করতে হয়।
আরেকটি বিষয় হলো, এএস১৫০ একটু বেশি উঁচু হওয়ায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির চেয়ে কম লম্বা যে কারো জন্য এই বাইকটি চালানো কষ্টকর। আর গিয়ার পরিবর্তন ছাড়া বাইকে আমি তেমন কোনো সমস্যা পাইনি। আমি ইঞ্জিন ওয়েল হিসেবে মটুল ২০ডব্লিউ-৫০ গ্রেডের ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করেছি এবং নির্দেশিত সময় অনুযায়ী সার্ভিসিংও করিয়েছি।
সময় দিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সবশেষে আমি বাইকারদেরকে অনুরোধ করবো বাইক চালানোর সময় অবশ্যই অবশ্যই হেলমেট পড়বেন। নিজের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করবেন। কষ্ট পাওয়ার চেয়ে সাবধান হওয়া ভালো। আর মনে রাখবেন হেলমেট ছাড়া বাইকার মুকুট ছাড়া রাজার মতোই :)
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com - এই ইমেইল এড্রেসে।
T
Published by Shuvo Bangla