Shares 2

Bajaj Pulsar 150 Twin Disc ১৫৫০০ কিলোমিটার রাইড - রাজীব আহম্মেদ

Last updated on 28-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

আমি রাজিব আহম্মেদ । আমি বর্তমানে Bajaj Pulsar 150 Twin Disc বাইকটি ব্যবহার করছি । আমার Bajaj Pulsar 150 Twin Disc বাইকটি বর্তমানে ১৫,২০০ কিলোমিটার চলছে । আজ আমি আমার এই বাইকটির ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

Bajaj Pulsar 150 Twin Disc ১৫৫০০ কিলোমিটার রাইড

bajaj pulsar 150 twin disc user

 আমি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে বসবাস করি । এটা আমার জীবনের সর্বপ্রথম বাইক। আমি আমার বাইকটা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। এই বাইক কখনও আমায় নিরাশ করেনি। আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি তখন থেকেই বাইক এর প্রতি আমার ভালোলাগা কাজ করে। 


বিশেষ করে ছোটবেলায় পালসার বাইকটির নাম শুনেছি এবং দেখতে অনেক ভালো লাগতো । তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলি বাইক কিনলে পালসার বাইকই কিনবো। সাধারণত বাইক নিয়ে খুব সহজে এবং স্বল্প সময়ের ভিতরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে যাওয়া যায়।


ছোটবেলা থেকেই পালসার ভালো লাগে তাই ভাবনা চিন্তা করে পালসার বাইকই নিলাম । বাইকটি নিয়ে আমি কলেজে যাতায়াত ও ছোট খাটো ট্যুর এবং পারিবারিক ছোট বড় নানা রকম কাজে যাতায়াত একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহার করে থাকি । আমি আমার Bajaj Pulsar 150 Twin Disc বাইকটি যখন ক্রয় করি তখন বাইকটির বাজার মূল্য ছিলো ১,৮৬,৯০০/- টাকা। আমি বরিশাল বাজাজ এর (পার্ক বাংলা) নামের শো-রুম থেকে ক্রয় করি।bajaj pulsar 150 side

 আমি (০২/১২/২০১৮) তারিখে বাইকটি ক্রয় করি। ওইদিন ছিলো আমার স্বপ্ন পূরনের স্মরণীয় দিন। আমার পরিবার থেকে যখন বললো, আমাকে বাইক কিনে দিবে, ঠিক সেই দিন থেকে আমার রাতের ঘুম চলে গেলো। সারারাত শুধু বাইক নিয়ে চিন্তা করতাম কেনার পরে বাইকটা কে কিভাবে সাজাবো কি কি মডিফাই করবো ইত্যাদি ইত্যাদি। যেদিন বাইক কিনতে যাবো, তার আগের রাতের ঘুম ঠিকমত হলো না। খুব সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে আব্বুর কাছে যাই । 


তারপর আব্বুকে নিয়ে বরিশাল এর উদ্দেশ্যে রওনা হই। সারাপথ শুধু বাইক নিয়েই ভাবতে ভাবতে বরিশাল পৌঁছালাম। (পার্ক বাংলা) শো-রুমে গেলাম। তখন শো-রুমে শুধু পালসার টুইন ডিক্স এর তিনটা বাইক ছিলো। তিনটা বাইকই ছিলো Black & Red রঙের। তখন বাইকটির অনেক চাহিদা ছিলো। যার জন্য মাত্র তিনটা বাইক পেয়েছি, তার ভিতর দুইটা বাইকের ফুয়েল ট্যাংক এবং বিভিন্ন স্থানে অনেক দাগ ছিলো। 


তাই একটু চিন্তা হচ্ছিলো। অন্য শো-রুমে ফোন করলাম। কিন্তু তাদের কাছে বাইক নাই। দুইটা বাইক দেখার পরে। দাগ দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম হয়তো তিন নাম্বার টাও এমন হবে। মনে হয় আমার বাইক কেনা আজ হবেনা। কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিলো আমার তিন নাম্বার বাইকটা ভালো ভাবে দেখলাম। কোনোরকম দাগ পেলাম না। তাই সাথে সাথে বললাম এইটাই নিবো। তারাতাড়ি সবকিছু রেডি করেন।


প্রথমবার বাইক চালানোর অনুভূতি আমি লিখে বোঝাতে পারবো না। অনেক এক্সাইটেড ছিলাম আমি। কখন বাইক নিয়ে বাড়ি আসবো। শো-রুম থেকে আমি নিজেই বাইক বেড় করলাম এবং ফুয়েল পাম্প থেকে বাইক এর ট্যাংক ফুল করলাম। বরিশাল থেকে সন্ধ্যার দিকে রওনা দিলাম সাথে আব্বুকে নিয়ে। প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ। শো-রুম থেকে বলে দিলো ৫০স্পিড এর নিচে চালাতে। 


তাই আব্বুকে নিয়ে ৪৫+স্পিড এ চালালাম এবং বাসায় আসতে আসতে আমাদের রাত ১ঃ৩০ বাজে। বাইকটি বর্তমান আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ই তৈরি হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে বাংলাদেশে কোন ABS ওয়ালা বাইক ছিলোনা। বাংলাদেশে যদি পালসার বাইক এ ABS দেওয়া হতো তবে অনেক ভালো হতো । 


বাইকটিতে রয়েছে আধুনিক গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং লুকিং সব কিছুই আমার ভালো লেগেছে । ডিজিটাল স্পিডো মিটার, টু পার্ট সিট, থ্রি পার্ট হ্যান্ডেলবার, হ্যালোজেন হেড লাইট, ইন্ডিকেটর লাইট ও এলইডি ব্যাক লাইট অনেক ভালো ।bajaj bike user

এই পর্যন্ত বাইকটি আমি বেশ কয়েকবার সার্ভিসিং করিয়েছি । আমার এলাকার নিকটস্থ বাজাজ শো-রুমের মেকানিক এর মাধ্যমে এবং সে একজন বাজাজ এর অভিজ্ঞ মেকানিক তার থেকেই সব সময় সার্ভিসিং করিয়েছি। সেই মেকানিক সব কিছু পর্যবেক্ষন করে দেখে শুনে তারপর কাজ করে থাকে। সার্ভিসিং করানোর সময় আমি বাইকের পাশে থেকে সবকিছু চেক করে কাজ করাই । 


ইঞ্জিনের কাজ শুধুমাত্র ১ বার করছে, শুধুমাত্র ট্যাপেট ক্লিয়ারেন্স এডজাস্ট করছে । ২৫০০ কিলোমিটার এর আগে বাইকটি থেকে মাইলেজ প্রতি লিটারে ৪০+ পেতাম। তারপর থেকে প্রতি লিটারে আমি গ্রামের রাস্তায় ৪৩-৪৪ মাইলেজ এবং হাইওয়েতে ৪৫+ পেতাম। আর এখনো পর্যন্ত এরকম ই মাইলেজ পাচ্ছি । আমি আমার বাইকের নিয়মিত ১০০০ -২০০০ কিমি পর পর বাইকের স্পার্ক প্লাগ ও এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করে থাকি । 


নিয়মিত ওয়াশ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখি সব সময়। প্রতি মাসে একবার করে সার্ভিস করাই। বাইকের যথা সময়েই ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ করে থাকি । আমি বাইকে সবসময় Shell Advance 20w50 গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে থাকি। মোটামুটি অনেক ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল এটা। এটা দিয়ে আমি ১০০০ কিলোমিটার চালাই।


Bajaj Pulsar 150 Twin Disc In Bangladesh


এখন পর্যন্ত বাইকের হাইড্রোলিক ব্রেকের মাস্টার সিলিন্ডার এর বাকেট ১ বার চেঞ্জ করা লাগছে, ব্রেক অটো কাজ করতো তাই এটা চেঞ্জ করা লাগছে। চেইন লক ১বার চেঞ্জ করছি৷ লকটা জ্যাম হয়ে গেছিলো তাই। হেডলাইট কন্ট্রোলার ১ বার চেঞ্জ করছি। 


থ্রোটল ছেড়ে দিলে হেডলাইট কাপা কাপি করতো তাই। বাইকের টুকিটাকি নিজের পছন্দ মতো বিভিন্ন মডিফাই করছি। বাইকের ইঞ্জিন গার্ড, পেছনের চাকার মাটগার্ড, ভালো আলোর জন্য এলইডি লাইট, সাইলেন্সারে R15 v2 ক্যাপ লাগাইছি, ২-৩ টা পালসার লেখা স্টিকার লাগাইছি এবং কিছু ইস্টিকার মডিফাই করছি। বাইকটি নিয়ে কলাপাড়া পটুয়াখালী হাইওয়েতে পিলিয়ন সহ ১১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পিড উঠাতে সক্ষম হই ।


বাইকটির কিছু ভালো দিক -

  • মাইলেজ যথেষ্ট ভালো
  • গ্রামের রাস্তায় চালিয়ে ভালো পারফরম্যান্স এবং কমফোর্ট পাওয়া যায়
  • ব্রেকিং সিস্টেম অসাধারন
  • পেছনে ১২০ এবং সামনে ৯০ সেকশনের টায়ার থাকায় চাকা স্কিড করে না
  • খুব সহজেই কন্ট্রোল করা যায়
  • দুটো টায়ারই টিউবলেস থাকায়, নিশ্চিতে লংরাইড করা যায়
  • সিটিং পজিশন,ফুট রেস্ট এবং হ্যান্ডেল বার ভালো হওয়ায় লংরাইড করলেও বেক পেইন এবং হাত ব্যাথা হয়না
  • উচু নিচু রাস্তায় এটার সাসপেনশন খুব ভালো কাজ করে
  • যথেষ্ট পাওয়ারফুল ইঞ্জিন
  • লংরাইডে বাইকের পাওয়ার লস করে না
  • এটার বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো
  • গ্রামের রাস্তার গর্তে পরে গেছি অনেক বার কিন্তু কখনো রিম বা চেসিস বাকা হয়নি

bajaj pulsar 150 twin disc user review

বাইকটির কিছু খারাপ দিক -

  • এটার খারাপ দিকের মধ্যে অন্যতম হলো এটা একটানা ৪০-৬০ কিলোমিটার চালানোর পর বাইকের সাউন্ড পরিবর্তন হয়
  • ইঞ্জিন অনেক হিট হয়
  • পালসার টুইন ডিক্সের খারাপ দিক হলো চেইনে একটা বাজে নয়েজ হয়
  • গ্রামের রাস্তায় চালালে চেইনে ধুলাবালি লেগে স্মুথনেস কমে যায়
  • আমার কাছে মনে হয়েছে পিলিয়ন সিট কমফোর্টেবল না
  • হেডলাইটের আলো খুবই কম


বাইকটি নিয়ে লং ট্যুর দিয়েছি ২০১৯ সালে, যদিও সঠিক তারিখ মনে নাই। এক দিনে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার রাইড করছি। ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ছিলো কিন্তু ৫০-৬০ কিলোমিটার পর সাউন্ড একটু চেঞ্জ হয়। রাইড এ প্রতি ৫০/৬০ কিলোমিটার পরপর বিরতি দিছিলাম। পারফরম্যান্স ড্রপ করেনি ও রাস্তায় কখনো হতাশ করেনি আমায় । বাইকটি আমি এক হাতে ব্যবহার করে থাকি, লো বাজেটে ১৫০ সিসি সেগমেন্ট এর ভিতর ভালো একটি বাইক এটা । 


কখনো রানিং এ কোন সমস্যা হয়নি, এটার সার্ভিসে আমি সন্তুষ্ট । খুব ভালো সার্ভিস পাচ্ছি এখনো । যদি কেউ কনফিউশনে থাকেন পালসার টুইন ডিক্স বাইকটি নিবেন। আমি পার্সোনালি বলবো চোখ বন্ধ করে নিয়ে নেন। আর যাই হোক পালসার আপনাকে কখনও নিরাশ করবে না আশা করি। ধন্যবাদ।

লিখেছেনঃ রাজীব আহম্মেদ


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।

Published by Raihan Opu Bangla