Shares 2

বাংলাদেশের সেরা সব হাওর। কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, ভ্রমণের খরচ

Last updated on 28-Jul-2024 , By Raihan Opu Bangla

বর্তমান সময়ে হাওরে ভ্রমণ বাইকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ আমরা বাংলাদেশের সেরা সব হাওর সম্পর্কে জানতে চলেছি। এই সময়টাতে হাওরগুলো তাদের আসল রূপ ফিরে পায়। তাই হাওর ভ্রমণের জন্য এই সময়টা উপযুক্ত সময়। কিন্তু এই সময়ে হাওরের পানি অনেক বেশি থাকে তাই একটু অসাবধান হলে যে কোন ধরণের বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা সবাই জানি হাওর মানেই নৌকা ভ্রমণ আর এই সময় অবশ্যই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করবেন কখনোই এক নৌকাতে বেশি লোক যেনো না উঠানো হয়। 

best lake in bangladesh view

১-মিঠামইন কিশোরগঞ্জঃ

বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা সব হাওর এর মধ্যে বাইকারদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হাওর হচ্ছে মিঠামইন। সোস্যাল মিডিয়াতে কিছু ছবি এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সুযোগ পেলে বাইকাররা ছুটে যাচ্ছেন এই হাওরে। কিশোরগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলা নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা এর প্রায় সবটুকুই হাওর অঞ্চল। বর্ষাকালে হাওর অঞ্চল পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। বর্ষার শেষে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করে। হাওরের বুকে যোগাযোগের জন্যে নির্মিত সাবমার্সেবল রাস্তা গুলো তখন ভেসে উঠে। মিঠামাইনের এই দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝাই যাবে না আমাদের দেশটা আসলে কত সুন্দর।

মিঠামইন কিশোরগঞ্জ সম্প্রতি অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-ইটনা এই তিন উপজেলায় সংযোগের জন্যে ৪৭ কিলোমিটার উঁচু পাকা অলওয়েদার রোড চালু করা হয়েছে। এর ফলে শুধু বর্ষাকালে না সারাবছরের যে কোন সময় আপনি এখানে ঘুরতে যেতে পারবেন প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে।

ঢাকা থেকে মিঠামইন কিশোরগঞ্জ যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে একদিনে গিয়ে মিঠামাইন থেকে ঘুরে আসা সম্ভব। তবে তার জন্য আপনাকে খুব সকালে ঢাকা থেকে রউনা দিতে হবে। ঢাকা থেকে সবার আগে বাজিতপুর এসে বাজিতপুর থেকে অষ্টগ্রাম যাওয়া যাবে।

হাওর ছাড়াও দেখার মতো যা কিছু আছে মিঠামইন কিশোরগঞ্জেঃ

১- অষ্টগ্রামের ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। 

২- মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি।

খাবার ব্যবস্থাঃ মিঠামইন বাজারে আপনি আপনার পছন্দের প্রায় সব রকমের খাবার পাবেন। যেহেতু এটি একটি হাওর এলাকা তাই হাওর মাছ প্রেমী মানুষের কাছে এখানকার খাবার খুব ভালো লাগবে। কারন এখনে আপনি পাবেন হাওরের তাজা বিভিন্ন ধরণের মাছ। মিঠামইনে অধিকাংশ মানুষ একদিনের জন্য ঘুরতে যায়। তাই এই জায়গায় থাকার খুব ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। তবে আপনি যদি চান তাহলে সরকারি ডাক বাংলোতে রাতে থাকতে পারবেন। আর ডাক বাংলোতে থাকতে খুব বেশি টাকা খরচ হয় না। 

হাওরের মাছ

২-ইটনা হাওরঃ

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরগুলোর মধ্যে ইটনার হাওরগুলো খুব বেশি জনপ্রিয়। এর অন্যতম প্রধাণ কারন হচ্ছে সারা বছরই ইটনার হাওড় গুলোতে কম বেশি পানি থাকে। কিন্তু বর্ষাকালে হাওরগুলো তার আসল রূপ ফিরে পায়। আর এই সময়টাতে আপনি হাওরগুলোর যেদিকেই তাকান না কেনো দেখতে পারেন শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝে একগুচ্ছ ছোট ছোট বসতি, এই রূপ দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য কোন এক জগতে। এই এলাকায় যেহেতু সারা বছর পানি থাকে তাই আপনি অনেক নৌকা একসাথে দেখতে পাবেন। 

ইটনা মিঠামইন

ঢাকা থেকে ইটনা হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে ইটনা যেতে হলে সবার আগে আপনাকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। কিশোরগঞ্জের একরামপুর মোড় থেকে আপনাকে আপনাকে যেতে হবে চামটাঘাট। চামটাঘাট থেকে আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে ট্রলার ভাড়া করে নিতে পারেন। ট্রলারের সাইজ অনুসারে সারাদিনের জন্য ট্রলার ভাড়ায় আপনার খরচ হবে ৩০০০-৫০০০ টাকা। তবে যদি আপনারা অনেকে মিলে যান তাহলে চেষ্টা করুন বড় ট্রলার ভাড়া নেয়ার জন্য।

ইটনা শাহী মসজিদ

 

হাওর ছাড়াও দেখার মতো যা কিছু আছে ইটনাতেঃ

১- ইটনা শাহী মসজিদ। 

২-দেওয়ান বাড়ি।

৩-মহেশগুপ্তের জমিদার বাড়ি।

৪-গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি।

খাবার ব্যবস্থাঃ ইটনা বাজারে ভালো ভালো কিছু খাবার হোটেল পাবেন। আর এই জায়গায় হাওরের মাছ খুব জনপ্রিয়। আপনি যদি মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন তাহলে কিশোরগঞ্জ শহরের মদনগোপাল অথবা রাজমনী সুইটসের মালাইকারীত এবং একরামপুর ব্রিজের কাছে লক্ষীভান্ডারের রসমালাই খেয়ে দেখতে পারেন। পর্যটকদের জন্য ইটনায় থাকার খুব ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। তবে আপনি যদি থাকতে চান তাহলে ইটনা জেটি থেকে ডান দিকে ঠাকুর গেস্ট হাউসে থাকতে পারেন। এতে আপনার খরচ হবে ৩০০ টাকার মতোন।

৩- অষ্টগ্রাম হাওর, কিশোরগঞ্জঃ

অষ্টগ্রাম হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে অষ্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার।  অষ্টগ্রাম হাওরের উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন ও ইটনা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছির নগর, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাছিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ও নিকলি উপজেলা। অষ্টগ্রামের অবস্থান ঠিক মাঝখানে। 

অষ্টগ্রাম হাওর

উত্তাল বতাস, মাঝিদের গান, জেলেদের ব্যস্ততা, ছোট ছোট নৌকায় মানুষের যাতায়াত, সব কিছু মিলিয়েই চারপাশটা হয়ে উঠে দেখার মত। আপনি যদি হাওর অঞ্চলের ভিন্নরূপ দেখতে চান তাহলে আপনি শীতকালেও এখানে বেড়াতে যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে অষ্টগ্রাম হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে অষ্টগ্রাম মূলত দুভাবে যাওয়া যায়, একটি হচ্ছে সড়ক পথ এবং অন্যটি হচ্ছে পানি পথ। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে আপনাকে কুলিয়ারচর আসতে হবে। সেখান থেকে লঞ্চে করে অষ্টগ্রাম যেতে পারবেন।  আপনি যদি বর্ষাকালে না আসেন তাহলে সড়ক পথ ধরে আসতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে বাজিতপুর উপজেলায় আসতে হবে। বাজিতপুর উপজেলা থেকে চলে আসুন দিঘির পাড়। দিঘির পাড় থেকে ১০ মিনিটের নদী পার হয়ে চলে আসতে পারেন অষ্টগ্রাম এলাকায়।

হাওর ছাড়াও দেখার মতো যা কিছু আছে অষ্টগ্রামেঃ হাওর  ছাড়াও অষ্টগ্রামে দেখার মত আছে ৪০০ বছরের পুরনো কুতুবশাহ মসজিদ। অষ্টগ্রাম গেলে অবশ্যই দেখে আসবেন। সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যের বৈশিষ্টের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি অষ্টগ্রাম থানা সদরে অবস্থিত।

খাবার ব্যবস্থাঃ আপনি চাইলে এখানকার স্থানীয় হোটেল থেকে মন ভরে বিভিন্ন রকমের মাছ দিয়ে সাদাভাত ক্ষেতে পারবেন। আর নিজেরা যদি রান্না করতে চান তাহলে সে ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু এর জন্য আপনাকে আগে থেকে স্থানীয় লোকদের সাহায্য নিতে হবে। এখানে থাকার জন্য কোন হোটেল নেই। তবে আপনি আগে থেকে যোগাযোগ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে উঠতে পারেন। এখানে রুম অনুসারে থাকার খরচ পরবে ৩০০-১৫০০ টাকা। অষ্টগ্রাম এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনারা চাইলে এখানে ক্যাম্পেইন করতে পারেন। কিন্তু অল্প লোক থাকলে এই কাজটি না করায় উত্তম। যখন দল বেধে যাবেন তখন স্থানীয় লোকদের সহায়তা নিয়ে আপনারা ক্যাম্প করতে পারেন। যদি নিরাপত্তার অভাব অনুভব করেন তাহলে স্থানীয় থানার সাহায্য নিয়ে নিবেন।

৪-নিকলী হাওরঃ

বাংলাদেশের হাওরগুলোর মধ্যে নিকলী হাওর বেশ জনপ্রিয়। ঢাকা থেকে নিকলি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। পানিতে দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন দেখার মতো রয়েছে আরো অনেক কিছু। এই সব কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে।

ঢাকা থেকে নিকলী হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে নিকলী আসার কয়েকটা পথ রয়েছে। তবে ভ্রমণের সময় আমরা ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ গিয়েছিলাম এবং সেখান থেকে নিকলী বাজার গিয়েছিলাম। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে ট্রলার ভাড়া করে হাওর ভ্রমণ করেছিলাম।

আরও পড়ুন>> নতুন রাইডারদের নিয়ে ভ্রমন – টিম NRB । বাইকবিডি

হাওর ছাড়াও দেখার মতো যা কিছু আছে নিকলীতেঃ

১- গুরই শাহী জামে মসজিদ।

২-নিকলী বেড়ি বাঁধ।

৩- পাহাড় খাঁর মাজার।

৪- গুরই প্রাচীনতম আখড়া। 

নিকলী হাওর ক্যাম্পিং

খাবার ব্যবস্থাঃ নিকলী এলাকায় খাবারের জন্য অনেক হোটেল আছে, তবে ভীড় বেশি থাকলে সেখানে খাবার পাওয়া কিছুটা মুশকিল হয়ে যায়। তবে এদের মধ্যে টেল সেতু, ক্যাফে ঢেউ উল্লেখযোগ্য। এখানে মাছ এবং বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে খাবার খেতে খরচ হয় ১০০-২০০ টাকা। নিকলীতে থাকার মতো ভালো কোন ভালো মানের আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা নেই। 

ডিঙ্গাপোতা হাওর

৫-ডিঙ্গাপোতা হাওরঃ

নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ডিঙ্গাপোতা হাওর বাংলাদেশের সেরা সব হাওর মধ্যে অন্যতম। বর্ষাকালে হাওরের অথৈ জলের ধারার সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের মোহিত করে। মাছের মৌসুমে হাওরের পাড়ে জেলেদের পরিবার নিয়ে অস্থায়ী আবাসস্থলগুলো কাছ থেকে হাওরের জেলেদের জীবনযাপন দেখার সুযোগ করে দেয়।

ঢাকা থেকে ডিঙ্গাপোতা হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে আপনাকে সবার প্রথমে নেত্রকোণা যেতে হবে। নেত্রকোণা থেকে মোহনগঞ্জ, মোহনগঞ্জ থেকে তেতুলিয়া ঘাট যেতে হবে এই ঘাট থেকেই আপনি ট্রলারে করে ডিঙ্গাপোতা হাওর যেতে পারবেন।

খাবার ব্যবস্থাঃ আপনি যদি চান তাহলে মাঝির সাথে আগে থেকে কথা বলে ট্রলারেই রান্নার ব্যবস্থা করতে পারেন। এর ফলে আপনি হাওরের অপরূপ পরিবেশ দেখার পাশাপাশি হাওরের সুস্বাদু মাছে স্বাদ একটু ভিন্নভাবে নিতে পারবেন। কিন্তু আপনি চাইলে ঘাটের থেকেও খাবার খেয়ে নিতে পারেন। 

টাঙ্গুয়ার হাওর

৬- টাঙ্গুয়ার হাওরঃ

বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে Ecologically Critical Area (ECA) হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট (Ramsar site) এর তালিকায় স্থান করে নেয়। টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহারগুলো দেখা যায়। মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা বা ছড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিশেছে। টাঙ্গুয়ার হাওর  সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। অথৈ পানি, জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এই হাওরকে অপরুপ সাজে সাজিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬৯১২ একর। তবে বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে সবার প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। সুনামগঞ্জ থেকে যেতে হবে তাহিরপুর, তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে বেড়িয়ে ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে। তবে শীতকালে পানি কমে যায় বলে আপনাকে যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন। নৌকার সাইজ এবং নৌকায় কি কি ব্যবস্থা আছে এর উপর নৌকার ভাড়া নির্ভর করে। সময় ভেদে এই ভাড়া ১৫০০-৫৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।  

জাদুকাটা নদী

টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখার মতো যা কিছু আছেঃ

১- লেউচ্ছামারা বিল

২- বেরবেড়িয়ার বিল ৩- এছাড়াও রয়েছে রৌয়ার বিল, গজারিয়ার বিল, আলমের ডোয়ার, সাংসার বিল, কৈখালি বিল, ছুনখোলা বিল, জিততলার গোপ, ফইল্লার বিল, রূপাভুই বিল, সত্তার বিল, মইষের গাতা, হাতির গাতা, বালোয়ার ডোবা, আমছারের বিল, কাউয়ার বিল, আনসারের বিল, খাজুরী বিল, আইন্নার বিল, নলকাঠির বিল ইত্যাদি৷

৪- হিজল বন

৫- জাদুকাটা নদী

৬- পাতলাই নদী

৭- শিমুল বাগান টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখার মতো অনেক কিছু আছে, তবে উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলো আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

৮- ওয়াচ টাওয়ার

খাবার ব্যবস্থাঃ যারা একদিনের জন্য যাবেন তারা তাহিরপুর থেকে নাস্তা করে হাওরে ঘুরতে যেতে পারেন এবং ভ্রমণ শেষ করে এসে তাহিরপুর থেকে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। টাঙ্গুয়ার হাওরে থাকার মতো তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ যদি রাতটা হাওরে পার করতে চান তাহলে আগে থেকে সেভাবে ট্রলার ভাড়া করে নিতে হবে। যে ট্রলারগুলোতে থাকার সব ব্যবস্থা আছে সেগুলোর ভাড়া ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। 

হাকালুকি হাওর

৭- হাকালুকি হাওরঃ

হাকালুকি হাওর সিলেট ও মৌলভীবাজারের ৫টি উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত , বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির হাওর। বর্ষাকালে হাওর সমুদ্রের রূপ ধারণ করে।। হাকালুকি হাওর প্রায় ২৩৮ টি বিল ও ১০ টি নদীর সমন্বয়ে গঠিত এবং বর্ষাকালে এই হাওরের আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। এই হাওর মাছের জন্য অনেক বেশি প্রসিদ্ধ, আর শীতকালে অতিথি পাখিদের জন্য। অতিথি পাখি দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হচ্ছে হাকালুকি হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময়। এ সময় হাওরের চারপাশ অতিথি পাখির কোলাহলে মুখর হয়ে থাকে।

ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওর যাওর যাওয়ার উপায়ঃ আপনি খুব সহজে দুটি রুট ব্যবহার করে এই জায়গায় আসতে পারেন। প্রথমত ঢাকা থেকে হাকালুকি হাওরে যেতে আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া আসতে হবে। কুলাউড়া থেকে অটোরিক্সা বা রিক্সা ভাড়া করে সরাসরি হাওরে যাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকা থেকে এসে সিলেটের ঠিক আগের স্টেশন মাইজগাও আসতে হবে। সেখান থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার আসতে হবে, এই বাজারের নৌকাঘাটে এসে আপনি আপনার পছন্দ মতো নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন।

খাবার ব্যবস্থাঃ আপনি চাইলে মাঝির সাথে আগে থেকে কথা বলে নৌকায় নিজেরাই রান্না করে খেতে পারবেন।  হাওরে বিল ইজারাদারদের কুটিরগুলোতে বিল মালিকের অনুমতি নিয়ে কয়েকজন অনায়াসেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে লোক বেশি হলে জায়গা নাও হতে পারে। 

ধরন্তি হাওর

৮- ধরন্তি হাওরঃ

হাওরের কথা মাথায় আসলে সবার প্রথমে আমাদের চোখে কিশোরগঞ্জের ছবি ভেসে উঠে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সৌরভ বিলিয়ে থাকা হাওর সম্পর্কে অনেকেরই তেমন জানা নেই। ধরন্তি হাওর  তেমনি এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধারণকারী জলাভূমির নাম। নৈসর্গিক ধরন্তি হাওরের পূর্ব দিকে তিতাস নদী এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী সহ ছোট বড় আরও বেশকিছু খাল-বিল রয়েছে। হাওরের বুকে অপূর্ব সূর্যাস্থের দৃশ্য দেখে অনেকে আবার ধরন্তিকে মিনি কক্সবাজার নামে ডাকেন। ঢাকা থেকে ধরন্তি হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ঢাকা থেকে ধরন্তি হাওর যেতে আপনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে হবে, সেখান থেকে সরাইল উপজেলা।  এই হাওর সরাইল উপজেলায় অবস্থিত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার থেকে ধরন্তি হাওরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। 

দেখার হাওর

৯- দেখার হাওরঃ

বাংলাদেশের সেরা সব হাওর এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক চার উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম হাওর ‘দেখার হাওর’। দেখার হাওরকে বলা হয় বোরো ভান্ডার। আসছে ভরা বর্ষায় কখনো মিলবে উত্তাল জলের খেলা, কখনো আবার শান্ত হয়ে বয়ে চলা। হাওরের বুকে সাজে তখন সুবিশাল আকাশ। সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশ মুখ আহসান মারা এলাকায় ‘মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য’ স্বাগত জানাবে দেখার হাওরের একাংশ ভ্রমণে। 

ডিবির হাওর

১০- ডিবির হাওরঃ

বাংলাদেশের সেরা সব হাওর এর মধ্যে ডিবির হাওর  সিলেটের জৈন্তাপুরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে ডিবির হাওরের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। বর্ষাকালের পর বিলগুলো শাপলার রাজ্যে পরিণত হয়। তখন সমস্ত বিল জুড়ে হাজার হাজার লাল শাপলা ছড়িয়ে থাকে। ভোরে হাজারো লাল শাপলা আলোকিত করে রাখে চারপাশ। শীতকালে এই হাওর জুড়ে অথিতি পাখিদের রাজত্ব শুরু হয়। তখন সাদাবক, জলময়ুরী ও পানকৌড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলরবে মুখর হয়ে থাকে ডিবির হাওরের চারপাশ।

ঢাকা থেকে ডিবির হাওর যাওয়ার উপায়ঃ ডিবির হাওর যেতে হলে সবার প্রথমে আপনাকে সিলেট আসতে হবে, সেখান থেকে এগিয়ে যেতে হবে জাফলং এর রাস্তা ধরে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর ক্যাম্প চোখে পড়বে। এই ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ১ কিলোমিটার দূরত্বে শাপলা বিলের অবস্থান।

হাওর ভ্রমণের সময় বিশেষ সতর্কতাঃ

১- হাওর ভ্রমণের সময় বাইক পার্কিং করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিরাপদ কোন জায়গায় বাইক পার্কিং করুন এবং হেলমেট সংগে নিয়ে যাবেন। 

২- পানি যেমনি থাকুক অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সংগে রাখুন।

৩- রাতে নৌকায় থাকতে চাইলে অবশ্যই স্থানীয় কাউকে সংগে রাখুন এবং নৌকা হাওর পাড়ের কাছেই রাখুন।

৪- রাতে ক্যাম্প করে থাকতে চাইলে স্থানীয় লোকদের সাহায্য নিন , সবচেয়ে ভালো হয় স্থানীয় থানায় অবগত করে থাকলে।

৫- লোক বেশি থাকলে একের অধিক নৌকা নিন, কিন্তু এক নৌকায় বেশি লোক উঠবেন না।

৬- সাতার না জানলে হাওর ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। আজ আমরা জানলাম বাংলাদেশের সেরা সব হাওর সম্পর্কে, কিন্তু হাওর এখানেই শেষ না। আগামী পর্বে আমরা জানতে চলেছি প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকা সেই হাওরগুলো সম্পর্কে যার ঠিকানা আমরা অধিকাংশ মানুষ জানি না।

তথ্যসূত্রঃ ভ্রমণ গাইড , প্রথম আলো , কালের কন্ঠ , উইকিপিডিয়া        

Published by Raihan Opu Bangla