Shares 2
দেখে এলাম নেপাল – হিমালয় কন্ন্যা
Last updated on 04-Jul-2024 , By Shuvo Bangla
সম্প্রতি ঘুরে এলাম নেপাল। অসাধারণ লাগলো। এত সুন্দর সব কিছু - ঠিক ছবির মতো। আসতে মন চাইছিলো না। তবু সব পাখি নিড়ে ফেরে..এখন ফিরে আসার পর আবার যেতে ইচ্ছে করছে।
দেখে এলাম নেপাল – হিমালয় কন্ন্যা
নেপাল এমন একটি দেশ যেখানে আপনি একসাথে পাবেন আপনার ছুটি উপভোগের সবকিছু , এ যেন এক সব পাওয়ার দেশ। ইচ্ছে মত চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবেন একান্তে নিভৃতে আপনার অবসর আপনার নিজস্ব স্বকীয়তায় ।
বিলাসি প্রান জুড়ানো সবুজের হাতছানি আপনাকে মুগ্ধ করবে প্রাচীন কোন হ্রদের ধারে কিংবা জলপ্রপাতের কলকল ধ্বনির সাথে । ঐতিহাসিক মন্দিরের পবিত্রতা ছুঁয়ে যাবে আপনাকে ।
মন্দির ,স্বচ্ছ হ্রদ , সারি সারি সবুজ ভ্যালি , বন্য প্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র , পাহাড় কিংবা তাদের রাজপ্রাসদ সমূহ সব কিছুতেই মুগ্ধতা এ যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। আমার বন্ধু ঘুরে এসে যে বর্ননা দিলো, মন আর মানলো না। এই সময়টা ওখানের অফ সিজন। বৃষ্টি হয় মাঝে মাঝে। বেস্ট সময় হলো সেপ্ট – মার্চ।
আমি গিয়েছি প্লেন এ। ১৮ তারিখ। ফিরেছি ২৬ তারিখ। যেতে সময় লাগলো ১ ঘন্টা ১০ মিনিট মাত্র। খরচ হলো ১৯০০০ টাকা। আর সাথে নিলাম প্রায় ৪০০ ডলার কার্ডে। ৩০০ ডলার হলে শপিং ছাড়া বেশ ভালো ভাবে ঘুরে আসা যাবে। ভিসা নিয়ে যাইনি।
নেপালে “অন এরাইভাল” ভিসা নেয়া যায় ওখানের এয়ার পোর্ট থেকে। তাই আগে থেকে ভিসা নিতে হয়নি। কাগজ ঠিক থাকলে ঝামেলা হবে না। তবে ভালো হবে ডলার এন্ডরসমেন্ড করে গেলে ব্যাঙ্ক থেকে। আপনার কিছু সময় বাচবে যদি ইমিগ্রিশন এ ধরে। প্রথম বার দেশের বাইরে যাওয়া। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা এক্সাইটেড। প্লেন ঠিক সময়ই ছাড়লো। নামলাম ত্রিভুবন এয়ার পোর্ট এ।
চেকিং এ আমার সাধের লাইটার রেখে দিলো। নেপাল এ টুরিস্ট রা এলে প্রথমে যায় থামেল এ – রাজধানী কাঠমন্ডুর ভেতর ছোট একটি এলাকা টুরিস্ট দের জন্য করা। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে টেক্সি ওয়ালাদের হাক ডাক এ কান না দিয়ে প্রথমে এয়ারপোর্ট এর এ টি এম থেকে মাস্টার কার্ড দিয়ে নেপালের রুপি তুললাম। পরে একটা টেক্সি দিয়ে চলে এলাম থামেল। ৩০০ টাকা ভাড়া। কিন্তু আমি দিয়েছি ২০০/ টেক্সি ওয়ালাই একটা হোটেল এ নিয়ে গেলো। বলল-পছন্দ হলে নেবেন। পছন্দ হয়ে গেলো। পিল্গ্রিম হোটেল। ভাড়া ১০০০/ অফ সিজন বলে কম নিয়েছে।
কাঠ মণ্ডূর ভাড়া তুলনা মুলক ভাবে বেশি অন্য শহর পোখারা থেকে। তবে নেপালের হোটেল ভাড়া একটু কমই বলতে হবে। পোছে ছিলাম সাড়ে পাচটার দিকে। হোটেল ঠিক করে কাপড় চোপড় রেখেই বের হয়ে পড়লাম থামেল এর রাস্তায়। অসংখ্য দোকান এক টার পর একটা সাজানো রয়েছে টুরিস্ট দের জন্য। এত রকম বাহারি পসরা দেখে খুব ই মুগ্ধ হতে লাগলাম। আর অসংখ্য টুরিস্ট দেখতে পেলাম। বেশ ভালোই কাটলো।
নেপালের টুরিস্ট স্পট গুলোর দোকান গুলোতে ঘুরে খুব ই মজা পাবেন। এত রকম বাহারি পসরার মেলে – সব ই কিনতে ইচ্ছে করে। প্রচুর ফরেনার দেখবেন ঘুরছে কাধে ব্যাগ নিয়ে। মাঝে মাঝে ই নানা রকম রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, ডেন্স বার। চলার পথে অনেক রেস্টুরেন্ট এর লাইভ মিউজিক শুনতে পাবেন। অথবা কোন বার থেকে ভেসে আসা কোন ডান্স মিউজিক। অথবা কোন নেপালি সুরেলা সুর। বেশ মন মুগ্ধকর পরিবেশ বলা যায়। তবে জিনিস পত্র কেনার সময় বারগেইন করতে ভুলবেন না।
আর হ্যাঁ সব ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট এই ওয়াই ফাই আছে। কিছু অর্ডার করে নিশ্চিন্তে আপনার ল্যাপটপ, সেল দিয়ে ব্রাউজ করে নিতে পারেন অবসরে দু দন্ড। পরদিন ভোরে ৭ টার আগেই চলে গেলাম টুরিস্ট বাস স্পট এ। বাস ছাড়বে ৭-৩০ এ। যাবো পোখারা।
প্লেন করেছি পোখারা ঘোরা শেষ করে যাবার আগে একদিন কাঠ মন্ডুতে থেকে ঘুরে যাবো। পোখারা – নেপালের রানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কি মি পাড়ি দিয়ে ৬/৭ ঘন্টায় চলে গেলাম অন্নপূর্ণা পর্বত রেঞ্জের উপত্যকা পোখারা। এখান থেকে অন্নপূর্ণাসহ বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গে ট্রেকিং শুরু করেন অনেক পর্বতারোহী। বাস ভাড়া নিলো ৫০০/ এই বাস গুলো তে শুধু টুরিস্ট দের জন্য। প্রতিদিন ছাড়ে টুরিস্ট বাস স্পট থেকে। আসা খুবই সহজ। আর চাইলে হোটেল ম্যানেজার আপনার টিকেট কেটে রাখবে।
যাবার পুরোটা পথ পাহাড়ি আঁকা বাকা পথে আর পাহাড়ে ঘেরা। মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম। কিছুটা মিল পেলাম আমাদের বান্দরবন এর নীলগিরি যাবার পথ টার সাথে। সারি সারি উচু পাহাড়ের মাঝখানে আঁকা বাকা পথ।
এক পাশে বয়ে গেছে চমৎকার এক লেক। কি দারুন এক মিতালি, পাহাড়, পথ আর লেকের। মাঝখানে ২ বার হোটেল এ থামল কিছু খনের জন্য। ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ। যেখানেই যাবেন, প্রাকৃতিক দৃশ্য অতুলনীয় দেখতে দেখতে খাবার খেয়ে আবার উঠে পড়লাম। এক সময় পৌঁছে গেলাম পোখারা। অনেক শুনেছিলাম এর সুনাম। পোখারা কে বলা হয় নেপালের রানী।
এখানে বাস থেকে নামার পর ই অনেকেই ঘিরে ধরলো টেক্সির জন্য। উঠিনি। আমি একটু রয়ে সয়ে সব কাজ করতে পছন্দ করি। হাটতে লাগলাম। একটু পর একজন বলল তার মটর বাইক করে সে আমাকে পোখারা লেক সাইড (যেখানে টুরিস্ট রা থাকে- তাই অবশ্যই চেস্টা করবেন লেক সাইডে থাকার জন্য) এ নিয়ে যাবে বিনা ভাড়ায়। শুধু তার হোটেল টা একটু দেখতে হবে। যদি পছন্দ হয় থাকবো। ভালো ডিল। চলে গেলাম।
অবশ্য হোটেল পছন্দ হয়নি পরে হাটতে হাটতে বাইক ভাড়া করার ট্রাই করলাম। একটু বেশি মনে হল। সারি সারি বাইক রাখা ভাড়া দেয়ার জন্য। হ্যাঁ। এখানে আপনি পাস্পোর্ট জমা দিয়ে মটরবাইক/ বাইসাইকেল ভাড়া নিতে পারবেন। পরে খুজতে লাগলাম হোটেল। বেশি খুজতে হয়নি। “পিস আই” নামে একটা হোটেল ঠিক করলাম। দারুন শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়লাম। প্রথমেই হোটেল ম্যানেজার কে বলে একটা বাইক ৭০০ টাকা (নেপালি রুপি) দিয়ে রেন্ট এ নিলাম।
ফুয়েল নিজের। পালসার ১৫০ টা নিয়ে প্রথমে তেল নিলাম। এর পর চলে গেলাম ফিউয়া লেক। ফিউয়া লেক অসম্ভব সুন্দর ছবির মত একটা লেক। ঘুরে দেখলাম। ছোট ছোট বোট নৌকা ভাড়া নেয়া যায় ৪০০ টাকা/ ঘন্টা। যাবার একদিন আগে ঘুরেছিলাম। বেশ ভালো লাগলো।
নিজেই কিছুক্ষণ বৈঠা মারলাম এবং শুনতে পেলাম আমি নাকি প্রফেশনাল দের মত বাইছি। কি জানি - আগের জনমে মাঝি ছিলাম নাকি। ও হ্যাঁ। আপনি চাইলে ড্রাইভার বা মাঝি ছাড়াই বোট নিতে পারবেন। অনেক ছবি তুললাম।
বোট এ করে চলে জাওয়া যায় world peach stupa তে। অনেক টুরিস্ট দেখলাম। লেকের ভেতর এ খোলা রেস্তোরা আছে। আছে ইনডোর রেস্টুরেন্ট। আছে রাস্তার পাশে পসরা নিয়ে বসা নেপালি মেয়েরা। নিয়ে নিন খুব কম দামে প্রেয়সীর জন্য উপহার। ৪ জন ইউরোপিয়ান কে দেখলাম লাফ দিয়ে নেমে পড়ে ফ্রিজবি খেলা শুরু করলো।
একটা বাচ্চার সাথে পরিচয় হলো। এত সুইট। কিন্তু সে কিছুতেই ছবি তুলতে দিবে না। ---- ওখানে পরিচয় হলো চেক এর একটা মেয়ের সাথে। কথা বলে জানলাম ইতিমধ্য সে একা একা পর্বত আরোহন (ট্রেকিং) করে এসেছে। ঘুরে এসে ১৫ টা দেশ। বলে কি!! একা একা!! টাসকি খেলাম। তার সাথে ঘুরে বেড়ালাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে একসাথে খেয়ে হাটলাম পোখা্রার দোকান গুলো তে। দারুন। কি নেই এখানে। রাস্তায় অসংখ্য ফরেনার হাটছে।
অবশ্য আমি নিজে ই সেখানে ফরেনার কেউ ছবি তুলছে, কেনা কাটা করছে, রাস্তার পাশে গিটার নিয়ে বসে গান করছে। আমি নিজেও ওদের সাথে গান করলাম। একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখলাম নেপালের ঐতিহ্য বাহি নাচ হচ্ছে। দেখলাম। ভালো লাগলো সবকিছু। কি এক আবেশে ভরা সবকিছু। দারুন এক পরিবেশ। ও হ্যাঁ। এখানে নানা রকম ডেন্স বার ও আছে। তবে, বলা বাহুল্য, আমি সেই দলের না। ভিডিও দেখুন http://www.youtube.com/watch?v=sPZbq5DbZ9M
সারাং কোট
পর দিন ভোর রাতে বাইক নিয়ে চলে গেলাম সারাং কোট সূর্য দয় ও হিমালয় পর্বত দেখার জন্য। সাথে ম্যাপ ছিল। আর গাইড নেই নি। জিজ্ঞাসা করে করে চলে গেলাম। ওখানে গিয়ে মন একদম ভরে গেলো। আকাশ পরিষ্কার থাকায় ওখান থেকে ভোরের স্নিগ্ধ আলোতে দেখতে পেলাম দেখতে পেলাম হিমালয়। সাদা বরফে আচ্ছন্ন। মন কে অবশ করে ফেলো। দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এই দৃশ্য ভাষায় ব্যাক্ত করার মত নয়।
মন পরতে পরতে পূর্ণ হয়ে গেলো। এত সুন্দর!! এখানে টুরিস্ট দের জন্য একটা জায়গা তৈরি করা হয়েছে। সবাই ছবি তুলছে আর তুলছে। কিছু টা ঠান্ডা আছে। তাই কফি নিলাম। আবেশে দিলাম চুমুক। জীবন টাকে মনে হলো পূর্ণ। সবাই দেখলাম ছবি তোলায় বেস্ত। আমিও লেগে পড়লাম। ওখানে ২/৩ ঘন্টা ছিলাম। এর পর চলে গেলাম ডেভিস ফলস এ।
ডেভিস ফলস
১৯৬১ সালের ৩১ জুলাই বিকেলের রোদে সুইস তরুনী ডেভিস তার স্বামীর সাথে গোসল করতে নামলে লেক থেকে হঠাৎ দ্রুত বেগে নেমে আসা পানির স্রোতে ভেসে যায় ডেভিস। অনেক দিন পর তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে জীবত নয়, মৃত অবস্থায়। পরবর্তীতে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এ ঝর্ণার নামকরণ করা হয় ডেভিস ফলস। ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০০ মিটার গভীরের এ নয়নাভিরাম ঝর্ণাপ্রবাহটি বছরের প্রায় সব সময় চলমান থাকে। তবে জুন-সেপ্টম্বর এর দিকে এর গতি তারুন্যদীপ্ত হয়ে উঠে। খুবি ভালো লাগল ভিডিও দেখুন http://www.youtube.com/watch?v=WfmBSDXWtEY ২০ টাকা টিকেট। পানির তীব্র স্রোত। কি গর্জন তার। সবাই ছবি তোলায় বেস্ত। গেটের বাহিরে নানান পসরা। কিছু কেনা কাটা করলাম। নেপালে যে বারগেইন করতে পারবে - সেই ভালো করবে। এই দেশ চলে বারগেইন এর উপর।
ব্যাট কেভ
এর পর গেলাম ব্যাট কেভ (বাদুরের গুহা)। ৫০ টাকা টিকেট আর ৫০ টাকা দিয়ে একটা বাতি নিলাম ভাড়ায় অন্ধকার এর জন্য। সাথে তাই টর্চ রাখলে ভাল হবে।
মাহেন্দ্র নাথ কেভ
এই গুহায় যেতে পথে পড়বে মাহেন্দ্র নাথের গুহা। এখানেও গেলাম। বেশ লম্বা গুহা। তবে ভেতরে আলো আছে। মনে হলো প্রাচীন কোন রাক্ষসের গুহা তে নেমেছি। রাতে খেলাম চওমিন। আর বিকেলে খেয়েছিলাম নেপালের বিখ্যাত মম। ভেজ ও চিকেন এর পাওয়া যায়।
আমি ভেজ দিয়ে সারলাম। কারন মুরগি কিভাবে জবাই করেছে কে জানে। তবে খুজলে কিছু হালাল রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে।
সেটি রিভার ও গোরখা মিউজিয়াম
পর দিন গেলাম সেটি রিভার ও গোরখা মিউজিয়াম। সেটি রিভার এর পানি খুভি ঠান্ডা। ব্রিজ থেকে দেখতে পাবেন নদী বয়ে যাচ্ছে। টানেল দেখতে পাবেন।
বেগ নাজ লেইক
এর পর দিন শহর থেকে কিছুটা দুরে চলে গেলাম বেগ নাজ লেইক। গিয়ে আবারো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সারি সারি ছোট ছোট বোট রাখা। এত সুন্দর। ওখানে ১০০ টাকা দিয়ে ঘোড়ায় কিছু খন একা একা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। যাক, ঘোড়ায় চড়া শিখে গেলাম।
আসার পথে দেখলাম পথে পথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। নেপালি নাচ, ইত্যাদি। এদের ফেস্টিভ্যাল - গাই যাত্রা। সবাই সেজেছে গরুর সাজে। বাইক থামিয়ে ছবি তুললাম।
প্রায় ই পথে পথে পাহাড়ের গায়ে দেখতে পাবেন পাহাড়ি মন মুগ্ধকর ঝরনা। পানি খেলে দিল একদম ঠান্ডা হয়ে যায়। এত মিস্টি আর ঠান্ডা। আহহ। তার পরদিন চলে গেলাম ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা তে।
ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা
পাহাড়ের চুড়ায় অসম্ভব সুন্দর একটি তুষার শুভ্র প্যাগোডা। চারদিক কি পরিচ্ছন্ন আর এক পবিত্রতা ছড়ানো। মন ভালো হয়ে গেলো। পাহাড়ের অনেক উচু তে বলে দুরের দৃশ্য দেখে মন হারাবে বারেবার। কাছেই এক রেস্টুরেন্ট আছে। কফি খেতে খেতে উপভোগ করুন সন্ধ্যার বর্নিল শহর।
পুঙ্গি গড়
এই জায়গাটাএ সচরাচর সবাই যায় না। যেতে বেশ চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে আমাকে। আসলে প্যাগোডার পাশ দিয়ে পথ চলে যেতে দেখে বাইক নিয়ে দিলাম এক টান – দেখি পথে শেষে কি আছে – পথ তো আর ফুরায় না। অবশেষে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম আমি চলে এসেছি সমুদ্র লেভেল থেকে প্রায় ৩০০০ ফিট উচ্চতায়। একদম উপরে যাওয়ার জন্য আবার ৫ মিনিট হাটতে হলো। উপরে টাওয়ার বসানো।
ওখান থেকে পোখারা র বেস্ট ভিউ টা পাওয়া গেলো। চারদিকে সারি সারি পাহাড়, পর্বত লেক আর মাঝে এক টুকরো শহর – পোখারা। এখানে স্থানীয় একটি ছেলে – সুবাস আমাকে নিজ থেকে গাইড করে নিয়ে যায়। এই পথের ই একটি শাখা পথ দিয়ে – (আরো নানা উপ শাখা) চলে গিয়েছিলাম ওখানে পরিচিত হওয়া এক ফটগ্রাফার এর সাথে – এবার তার ভাড়া করা মাইক্র দিয়ে। ওখানে একটি লেক দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আর এখান থেকে ও দেখতে পেলাম হিমালয় - খুব সুন্দর একটি জায়গা।
এছাড়াও পোখারাতে আছে স্রোতস্বিনী নদীর ফেনিল-শুভ্র জলে রাফটিংয়ের অ্যাডভেঞ্চার। যারা আরও সাহসী তাদের জন্য আছে প্যারাগ্লাইডিংয়ের সুযোগ। ১০০০ টাকা দিয়ে আকাশ থেকে ঝাপিয়ে পড়তে পারবেন। পোখরার আশপাশে নদী ছাড়াও আছে লেক, ঝরনা, মন্দির।পকেটে টাকার জোর থাকলে বিমান বা হেলিকপ্টারে চড়ে এভারেস্টসহ বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গের কাছাকাছি চলে যেতে পারেন। এক ঘণ্টার মাউন্টেন ফ্লাইটে অন্তত দশটি পর্বতশৃঙ্গের পাশ দিয়ে উড়ে আসবেন। বুঝলাম, পোখারা কে কেনো নেপালের রানী বলা হয়। সত্যি, আসতে একদম মন চাইছিলো না। -- পোখারা থেকে ফিরে আসার ২ দিন আগে চলে এলাম কাঠমন্ডু।
কাঠমন্ডু আসার পথে বাসে পরিচয় হল ইটালির এক ফটোগ্রাফার আন্দেয়ার সাথে। সে বলল মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে সে থাকে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি??!! পরে তার সাথে টেক্সি ভাড়া শেয়ার করে গেলাম আলোবার২০০০ হোটেলে। আসলে সে ছিল ডরমিটরিতে। ডাবল খাট – ১ রুম এ ছয় জন। দেখে নিয়ে নিলাম। অভিজ্ঞতা হোক। প্রথমে তো আমরা ২ জন এ ছিলাম। একটু পর ইসরাইলি ২ টা মেয়ে এসে ঢুকে পরিচিত হয়ে নিলো। ওরাও থাকবে!! আমার বেশ আড়স্ট লাগছিলো। প্রাইভেসি নেই বলে।
তবে ভালো লাগলো সবার সাথে বেশ গল্প গুজব করে। হোটেল বুক করে আন্দেয়ার সাথে চলে গেলাম দরবার স্কয়ার। আর সন্ধ্যায় রাস্তায় কিছু শপিং করলাম। হায়। আমি ভুল করে কেনা ল্যাম্প এর কিছু ঝুলন্ত কাভার ফেলে এসেছি পরদিন সকালে আবার বাইক ভাড়া করলাম। বাইক নিয়ে চলে গেলাম ভগতপুর। ভগতপুর ভগতপুর সব রাজা রাজরা দের দরবার, নানা বড় বড় স্তম্ভ, পুরাকির্তি ও কারুকার্জ তে ভরা। ঐতিহাসিক মুল্য অনেক। ওখানে গিয়ে পেলাম আন্দেয়া কে। ২ জন ঘুরতে লাগলাম।
কুমারি দের বাসভবনে কুমারি জানালাতে এসে দেখা দিলো। গাইড এর নিষেধে কোন ছবি তোলা গেলো না। এর পর আমি চলে গেলাম নাগরকোট। নাগরকোট নাগরকোট এর পথ বান্দরবন এর মত সুন্দর। পাহাড়ের মাঝে মাঝে। আর অচেনা অনেক দারুন দারুন গাছ দেখলাম। পুরো পথ টাই মন টাকে মাতোয়ারা করে রাখলো। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনন্য।
অনেক উচ্চতার দিকে যাচ্ছিলাম। দিনে দুপুরে শুরু হলো ঠান্ডা লাগা। গালি দিলাম বন্ধুকে কেনো সে জ্যাকেট আনতে বলে নাই। উঠে গেলাম প্রায় ৩০০০ ফিট উপরে। ওখান দেখে চারপাশের ভিউ দেখে বলে উঠলাম “ওয়াও” হালকা ঠান্ডাতে চা নিলাম। সত্যি অনন্য।
বাইক ৬ টার ভেতর জমা দিতে হবে বলে ফিরে এলাম। নাহলে ইচ্ছে ছিলো ধুলিখেল যাওয়ার। আপনি অবশ্যই যাওয়ার চেস্টা করবেন। কাঠমন্ডু রাজধানী বলেই হয়তো জ্যাম বেশি। বাইক জমা দিয়ে অবশেষে হোটেলে ফিরে এলাম।
হোটেলের ছাদ এর এক প্রান্তে বার, মাঝে মাঝে খোপ খোপ করা। যে যার ইচ্ছে মত গিটার বাজাচ্ছে, মোবাইল এ ওয়াই ফাই দিয়ে ব্রাউজ করছে, আড্ডা মারছে। আমি হোটেল বদলে নিলাম। আমার প্রাইভেসি ই ভালো লাগে বেশি।
আবার শপিং করতে বের হলাম। পরদিন বিকেলে ফ্লাইট বলে দুপুর পর্যন্ত জতটুকু পারলাম কেনাকাটা করলাম। অবশেষে থামেল থেকে টেক্সি নিয়ে এয়ারপোর্ট। প্লেন এ আসার পথে ওয়েদার খারাপ হওয়াতে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জানালা দিয়ে দেখি বাজ পড়ছে। যাক। নিরাপদে ঢাকা এসে পোউছালাম।
এসে নেপালি রুপি গুলো (যা বেঁচেছে) টাকাতে কনভার্ট করে নিলাম। এই লিখাটির শেষ অংশ এই লিঙ্ক টিতে। আপনি কোন প্রশ্ন থাকলে লিঙ্ক টিতে গিয়ে কমেন্ট করতে পারেন যদি ব্লগ টির ইউজার হয়ে থাকেন। http://www.somewhereinblog.net/blog/hassantanvir/29874487 এছাড়া ফেইসবুকে আরো কিছু ছবি আছেঃ https://www.facebook.com/hassantanvir777 যাই হোক, এই হলো আমার নেপাল ভ্রমন। এ ছিলো আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। তাই ভালো লাগার মাত্রা আরো হয়তো বেশি ছিলো। আর দেশ হিসেবে নেপাল কে ১০০ দেয়া যেতে পারে। সুন্দর সাজানো গোছানো একটি দেশ। কারো কোন রকম পরামর্শ দরকার হলে নির্দিধায় জানাবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
-লিখেছেন হাসান মাহমুদ তানভীর
T
Published by Shuvo Bangla