Shares 2
করোনাভাইরাস: কিভাবে আমাদের শরীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে? বিস্তারিত জানুন
Last updated on 14-Jul-2024 , By Ashik Mahmud Bangla
করোনাভাইরাস কি সেটা আমরা সবাই জানি। আমাদের দেশে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একেবারে কম না। তাই আমাদের জানা থাকা উচিৎ করোনাভাইরাস কিভাবে আমাদের শরীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। নিজের একটু সাবধানতা আমাদেরকে এই মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
করোনাভাইরাস: কিভাবে আমাদের শরীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে? বিস্তারিত
গত বছরের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানা যায়। অধিকাংশ মানুষের জন্য এই রোগ খুব বেশি ভয়াবহ না, কিন্তু তারপরও অনেকেই মারা যায় এই রোগে। করোনাভাইরাস কিভাবে আমাদের শরীরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং কেনো অনেকে মারা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
১- প্রাথমিক লালনকালঃ
এই সময়ে ভাইরাসটি নিজেকে আমাদের শরীরে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করে। আমাদের শরীর গঠন করা কোষগুলোর ভেতরে প্রবেশ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার মাধ্যমে কাজ করে এই ভাইরাস। শুরুতে এটি আপনার গলা, শ্বাসনালীগুলো এবং ফুসফুসের কোষে আঘাত করে এবং সেসব জায়গায় করোনার সংক্রমণ তৈরি করে। এই শুরুর সময়টাতে আপনি অসুস্থ হবেন না এবং কিছু মানুষের মধ্যে হয়তো উপসর্গও দেখা দেবে না।
২- নিরীহ অসুখঃ
অধিকাংশ মানুষের জন্যই কোভিড-১৯ একটি নিরীহ সংক্রমণ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটিকে শত্রুভাবাপন্ন একটি ভাইরাস হিসেবে শনাক্ত করে এবং বাকি শরীরে সাইটোকাইনস নামক কেমিক্যাল পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেয় কিছু একটা ঠিক নেই। এর কারণে অনেকের শরীরে ব্যাথা ও জ্বরের মত উপসর্গ দেখা দেয়। শরীরে ব্যাথা, গলা ব্যাথা এবং মাথাব্যাথাও হতে পারে, তবে হবেই এমন কোনো কথা নেই।
কোষগুলো ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কারণে অস্বস্তিতে পড়ার কারণে সম্ভবত শুকনো কাশি হয়ে থাকে। তবে অনেকের কাশির সাথেই একটা পর্যায়ে থুতু বা কফ বের হওয়া শুরু করবে যার মধ্যে ভাইরাসের প্রভাবে মৃত ফুসফুসের কোষগুলোও থাকবে। এই সময় কি করনীয়? এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম, প্রচুর তরল পান করা এবং প্যারাসিটামল খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন হয় না। এই ধাপটি এক সপ্তাহের মত স্থায়ী হয়। অধিকাংশ মানুষ এই ধাপের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান কারণ ততদিনে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে সেটিকে প্রতিহত করে ফেলে।
৩- ভয়াবহ ব্যাধিঃ
২য় ধাপটি অতিক্রম করতে পারলে এই ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হওয়াকে নিউমোনিয়া বলে। আপনার মুখ দিয়ে প্রবেশ করে শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসের ছোট টিউবগুলোয় যদি যাওয়া যেত, তাহলে আপনি হয়তো শেষপর্যন্ত ক্ষুদ্র আকারের বায়ুথলিতে গিয়ে পৌঁছাতেন।
এই থলিগুলোতেই রক্তে অক্সিজেন যায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়। কিন্তু নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে এই ক্ষুদ্র থলিগুলো পানি দিয়ে ভর্তি হতে শুরু করে এবং ফলস্বরুপ শ্বাস নিতে অস্বস্তি তৈরি করা, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যার মত উপসর্গ তৈরি করে। চীন থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী, এই ধাপে ১৪% মানুষ আক্রান্ত হয়।
৪- অতি জটিল রোগঃ
এই ধাপে শরীর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে অসক্ষম হয় এবং মৃত্যুর বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে যে প্রায় ৬% করোনাআক্রান্ত ব্যক্তির রোগ অতি জটিল পর্যায়ে যায়। এই ধাপে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে এবং সারা শরীরে বিভিন্ন রকম ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসে তীব্র সমস্যা হওয়ার উপসর্গ দেখা দেয় ফুসফুসে প্রদাহ ছড়িয়ে পড়লে, কারণ সেসময় শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট অক্সিজেন পুরো শরীরে প্রবাহিত হতে পারে না। এর ফলে কিডনি রক্ত পরিশোধন ছেড়ে দিতে পারে এবং অন্ত্রের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ পর্যায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি ভাইরাসের সাথে পেরে না ওঠে তাহলে তা শরীরের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং আরো বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাস আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধাপে ধাপে ক্ষতি করতে থাকে। তবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ভালো থাকে তাহলে প্রথম ধাপেই আমরা সুস্থ হয়ে যেতে পারবো। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করুন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করুন।
তথ্য সূত্রঃ BBC NEWS BANGLA
T
Published by Ashik Mahmud Bangla