Shares 2

আমি কিভাবে ইয়ামাহা ফেযারে ৪০+ মাইলেজ পাই?

Last updated on 31-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

গত ০৯/০৩/১৫ তারিখে আমি একটি পোস্ট করেছিলাম “HAPPINESS IS HAVING 40+ MILEAGE WITH FAZER” যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই জানতে চেয়েছেন আমি কিভাবে Yamaha Fazer এ ৪০+ মাইলেজ পাই??? তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। পোস্ট অনেক বড়, তাই ধৈর্য থাকা আবশ্যক!!!

আমি কিভাবে ইয়ামাহা ফেযারে ৪০+ মাইলেজ পাই?

বিঃ দ্রঃ-fazer/fzs এ ৪০+ মাইলেজ পাওয়া কোনদিনও সম্ভভ না , অথবা আমি সস্তা পাবলিসিটি বা লাইক কমেন্ট পাওয়ার আশায় পোস্ট দিয়েছি, এই রকম মনভাবাপন্ন অতি বুদ্ধিমান প্রানিদেরকে আমি আমার আমার এই পোস্ট থেকে “দূরত্ব বজায় রেখে চলুন” নীতি গ্রহন করার আহ্বান জানাচ্ছি। পোস্ট এর প্রথমেই সবাইকে আমার সালাম এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । আশা করি সবাই ভালো আছেন।

যাই হোক ভূমিকা বেশি বড় না করে কাজের কথায় চলে আসি। আমার আজকের আলোচনার বিষয় হল, “আমি কিভাবে ইয়ামাহা ফেযারে ৪০+ মাইলেজ পাই???” তো চলেন ভাইয়েরা শুরু করি......

Yamaha Fazer

আমরা যারা বাইকার, তারা মোটামুটি সবাই কমবেশি জানি সাধারণত কি কি বিষয়ের উপরে মাইলেজ নির্ভর করে। কিন্তু সমস্যা হল আমরা সেই গুলি সঠিক ভাবে অনুসরণ করিনা।যার ফলাফল , আশানুরূপ মাইলেজ না পাওয়া এবং ব্যাপক চিল্লাচিল্লি করা। এই গ্রুপে সার্চ করলে কমপক্ষে ৫০+ পোস্ট পাওয়া যাবে, যেসকল পোস্ট এ অনেক অভিজ্ঞ বাইকার ভাই, মাইলেজের ব্যাপারে অনেক সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলি মানতে আমাদের বয়েই গেছে!!! আমরা চাই টান!!! ব্যপক টান!!! কে কত স্পীড উঠাইলাম, কার টা রকেট!! (আপু ভাই ডোন্ট মাইন্ড), কার টা সাবমেরিন আর কার টা বাংলালিংক 3G!!!

আবার কিছু ভাই আছেন যাদের বক্তব্য হল,(হেভী পাট সহকারে) “মাইলেজ দেইখা বাইক চালাইনা.........মাইলেজ চাইলে ১৫০ সিসি লইছেন কেলা? ৫০সিসি চালান, ব্যাটারি চালান!!! আমার বাপের টেকা আছে , সো আমার মাইলেজ লইয়্যা ন টেনশন......... ব্লা ব্লা ব্লা” ...আরে বলদের দল , ““মাইলেজ দেইখা বাইক চালাইনা............” বলার চে “আমি ১৫০ সিসি বাইকে ৪০+ মাইলেজ পাই” এইডা বলতে পারা অনেক বেশি পাটের!!!!(স্পেশালি যারা আমার মত নিজের কষ্টের পয়সায় ফুয়েল কিনে) ।

এইবার আসি সেই “এপিক” সম্প্রদায়ের কথায় যাদের বক্তব্য হোল এরকম........................... “ভাই কি ইঞ্জিন বদলায়া ৫০সিসি CUB এর ইঞ্জিন লাগাইছেন???” “ হালায় লাইকের আশায় এই পোস্ট দিছে, ১৫০সিসি তে ৪০+!!! লল!!!” “১৫০সিসি তে ৪০+!!! হুম জানি, ম্যানুয়াল বুকে পাওয়া যায়”।

যাই হোক আমি এইহেন চুল্কানি গ্রস্থ লোকজনদের এই পোস্ট থেকে দূরত্ব বজায় রেখে পাগলা মলম ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি, কারন আমাদের দরকার মাইলেজ, আপনার দরকার পাগলা মলম!!!! অকে, এন্টারটেইনমেন্ট পর্ব শেষ, এইবার আসল পর্ব শুরু।

ভালো মাইলেজ পাওয়ার জন্য যে সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা পর্যায় ক্রমে নিচে আলোচনা করা হল। ফুয়েল পাম্পঃ- ভাল মাইলেজ পাওয়ার সর্ব প্রথম শর্ত হল ভালো ফুয়েল পাম্প। আমার জানামতে হাতে গোনা কয়েকটা পাম্প ছাড়া বাকি সব চোর। আসলে খালি চোর কইলে মনের জ্বালা মিটবো না, ডাকাইত বলা যায়। এবং আমরা মাইলেজে আসল মাইর তা খাই এই পাম্প থেকেই। আপনি যদি ১ লিটারের জায়গায় ৮৫০ ml ফুয়েল পান, সেই ক্ষেত্রে, “তেল আম্নের গাড়ি বেশি খাইবে নাতো কি মোর ডা খাইবে??” আর ফুয়েলে যে কি কি মিশায় তাও কি আমার বলে দিতে হবে?? এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, “তাইলে কোন পাম্প থেকে ফুয়েল নিব? ক্যামনে বুঝবো কোন পাম্প ভালো?” আছে আছে ভাই...উত্তর আছে।

বিজয় সরনি মোড়ের TRUST FUEL PUMP এর উপরে মোটামুটি সবারি trust আছে, আমি নিজেও ব্যবহার করে দেখছি। ৪০+ পাইছি। সো u can trust on TRUST. এছাড়া শেরাটনের ডান দিকের (পরিবাগ) পাম্পের ফুয়েল ভালো বলে শোনা যায়। কল্যাণপুরের খালেক, উত্তরার (আব্দুল্লাহপুর)খন্দকারের ফুয়েল ও আমি ভালো পাইছি। আর বর্তমানে আমি ব্যবহার করি টঙ্গি ব্রিজ টা শেষ হলেই যেই পাম্পটা, (পথিক) সেইটার পেট্রোল। বলা বাহুল্য ইহাই আমার জিবনে প্রাপ্ত সবচে ভালো ফুয়েল।

ইঞ্জিন অয়েলঃ- সাধারণত আমরা “মবিল” নামে চিনি। যাই হোক নামের ইতিহাস বাদ দিয়া কামের ইতিহাস কই। “মবিল” এর মুল কাজও সবাই জানি, সো এই বিষয় নাই আর না কপচাই। ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্সাম্পসন ইঞ্জিন অয়েল এর সাথে ভালো ভাবেই জড়িত। তাই সব সময় কোম্পানির অনুমোদিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন।কারন কোম্পানির অনুমোদিত গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের internal heat কে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বাইক কে অতিরিক্ত ফুয়েল খাওয়া থেকে বিরত রাখে। উদাহরন সরুপ- ইয়ামাহা’র জন্য recommended হল 20w40, হিরো’র জন্য 10w30 ইত্যাদি । অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পরপর ইঞ্জিন অয়েল এবং ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার পরিবরতন করুন।

টায়ার প্রেসারঃ- ভাই, আপনার টায়ারে প্রেশার কত আছে? কেন ৩৫/৪৫!!! “এই তুমি না একজন এডুকেটেড ছেলে!!! নিজের বাইকের ম্যানুয়াল বুক টাও কোনদিন পড়ে দেখনাই”?? আচ্ছা মানলাম ম্যানুয়াল বুক পড়ার সময় নাই, তাই বলে চেইন কাভারে বা টায়ার হোল্ডিং বার এ যে একটা স্টিকার লাগানো থাকে সেটাও কোনদিন চোখ মেলে দেখ নাই??? ম্যাক্সিমাম বাইকের টায়ার প্রেশার ২৮/৩৩ (+- ১/২) রিকমেন্ডেড। রিকমেন্ডেসন অনুযায়ী হাওয়া দিয়া দেখেন তো, মাইলেজ বাড়ে কিনা???

এয়ার ফিল্টারঃ- এইটা মোটামুটি সবাই জানে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এয়ার ফিল্টার ক্লিন করা (সাধারণত ২০০০ কিমি পরপর অথবা প্রতি সারভিসিং এর সময়, বেশি dusty এলাকা হলে আর একটু ঘন ঘন ) উচিত। তাতে ইঞ্জিনের ভেতরে পর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সঠিক মাত্রায় ফুয়েল বার্ন হয়। এয়ার ফিল্টার এর কাজটা অনেকটা আমাদের নাকের মত। নাক পরিস্কার থাকলে যেমন আমরা ঠিকমতো নিঃশ্বাস আদান-প্রদান করতে পারি এবং ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করে, এয়ার ফিল্টার বাইকের ক্ষেত্রে ঠিক একই ভূমিকা পালন করে।

কারবুরেটর ক্লিন-আপ ও সেটআপঃ- ফুয়েল কন্সাম্পসন এর সবচে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারুরেটরের কাজ সবাই জানেন তো?? অই মিয়ারা হাত তুলেন না ক্যান??? আওয়াজ দেন। হ হ হজ্ঞলে জানি!!! যারা বাইক চালায় তারা মোটামুটি সবাই জানে কারুরেটরের কাজ কি। ট্যাংক থেকে ইঞ্জিনে ফুয়েল প্রবাহিত হওয়ার এই পথ টাই ঠিক করে আমার বাইক এর জন্য ঠিক কতটুকু ফুয়েল প্রয়োজন। তাই কারবুরেটর যদি সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা না হয় বা টিউনিং ভুল থকে তাহলে বাইক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ফুয়েল খাবে। অতএব অধিক মাইলেজের জন্য কারবুরেটর ক্লিন-আপ ও সেটআপ অত্যাবশ্যক। কাবুরেটর সেটআপ এর জন্য সব সময় একজন অভিজ্ঞ মেকানিকের শরণাপন্ন হউন, নিজে গুতাগুতি করে বাইকের ১৪টা বাজানো থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল।

স্পার্ক প্লাগঃ- কি ভাই? কি ভাবেন? স্পার্ক প্লাগের সাথে ফুয়েল ফুয়েল কন্সাম্পসন এর সম্পর্ক কি? আছে ভাই, গভীর সম্পর্ক আছে। স্পার্ক প্লাগ যদি নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্লিন করা না হয়, অথবা এর গ্যাপ কমে যায় তাহলে স্পার্ক এর Quality, duration & strength কমে যাবে, যার ফলে ইঞ্জিন স্টার্ট নিতে সমস্যা হয়, acceleration এর power কমে যায়। ফলাফল , স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি acceleration claim করতে হয় এবং ফুয়েল কন্সাম্পসন বেড়ে যায়। অতএব যেই ভাই-বেরাদারদের বাইক “কামের চেয়ে ঘামে বেশি” তারা একবার স্পার্ক প্লাগ তা চেক করে দেখেন। সমস্যা নাই, কাজ হইলে আমারে কিছু দেওয়া লাগবে না!!! grin emoticon grin emoticon grin emoticon.

চেইন লুব্রিকেশনঃ- এইখানেও স্পার্ক প্লাগ মতো সেম কাহিনি। আপনার বাইকের চেইন যদি right adjustment না থাকে বা ঠিক মতো লুব করা না হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি থ্রটল প্রেস করতে হবে, যা ফুয়েল অপচয়ের অন্যতম কারন। তাই প্রতি ১৫ দিন অন্তর চেইন চেক করে Right Adjustment and Lube করে নিন। দেখেন ক্যামন মাখনের মতো চাক্কা ঘুরে!!! চেইনে গ্রিস, ভালো মবিল, পোড়া মবিল, গিয়ার অয়েল, সয়াবিন তেল............ জা মন চায় দেন!!! কিন্তু চেইন ভিজা রাখেন, চইরা ও আরাম পাইবেন (বাইকে), ভইরাও খুশি থাকবেন!!!!! (ফুয়েল)।

এই সমস্ত কারন ছাড়াও আপনার বাইকের বয়স, রাইডিং হ্যাবিট, রোড কন্ডিশন, ওয়েদার , সারভিসিং হিস্ট্রি ,ইঞ্জিনের ইন্টারনাল কন্ডিশনের উপরেও ফুয়েল কন্সাম্পসন নির্ভরশীল। মোদ্দা কথা হল আপনার বাইকের ফুয়েল কন্সাম্পসন আপনার হাতেই। তাই আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি প্রতি লিটারে ২৫ কিমি চালাইবেন নাকি ৪০ কিমি চালাইবেন????

পরিশেষে বলি, লেখাটা এত বড় করার ইচ্ছা ছিলনা, কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছে হয়ত কিছু বাদ পরে গেল। আর আমার লেখালেখির অভ্যাস না থাকায়, পোস্ট টা অনেক অগোছালো হয়েছে। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন, আর অবশ্যই হেলমেট পড়ে বাইক চালাবেন। কারন হেলমেট পড়লেও ফুয়েল সেভ হয়!!

লিখেছেন -  Hassan Shaon

Published by Shuvo Bangla