Shares 2

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - তূলনামূলক রিভিউ

Last updated on 07-Jul-2024 , By Shuvo Bangla

আমাদের দেশে সিসি লিমেটেশন থাকায় দ্রুত গতির বাইক এদেশে আসে না। তবে আমাদের দেশে ১৫০সিসি কিমিউটার সেগমেন্ট এর অনেক বাইক রাস্তায় চলাচল করে। এরা প্রতিটি নিজ নিজ জায়গায় দারুন, যারা এই সমস্ত বাইক কিনতে যান তখন কনফিউজ হয়ে পড়েন যে কোনটা রেখে কোনটা কিনবেন। এসকল কনফিউশন দূর করার জন্য আজ আমরা নিয়ে এসেছি ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর তূলনামূলক  রিভিউ।

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - স্টাইল এবং আউটলুক

আজ আমাদের কম্পারিজন এর দুটি বাইক ই কমিউটার সেগমেন্টে একে অন্যের প্রতিযোগী। তবুও এদের মধ্যে আকর্ষনীয় লুক এবং স্পোর্টি স্টাইল এর কারণে রেগুলার কমিউটার বাইক থেকে এরা আলাদা। আপনি যদি একটু স্পোর্টি টাইপের হন তবে ইয়ামাহা এসজেড  আরআর ভার্সন ২.০ এর লুক শার্প এবং আক্রমনাত্মক চেহারা আপনার ভাল লাগবে। অপর দিকে হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর লুক পেশীবহুল এবং শার্প। তাছাড়া বক্সার টাইপ পেশী বহুল চেহারার কারণে আরো আক্রমনাত্মক দেখায়। তাই বলা যায় যে সিবি ট্রিগার লুকসের দিক দিয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

Yamaha SZRR এর বর্তমান বিক্রয়মূল্য দেখতে এখানে ক্লিক করুন

yamaha szrr price in bangladesh

যদি আপনি ভালোভাবে  বাইকদুটিকে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখবেন গঠন এর দিক থেকেও এরা প্রায় একইরকম, তবে এদের মাঝে অনেক পার্থক্যও রয়েছে। ইয়ামাহা এসজেড আরআর এর গঠন অনেক শার্প, এবং এর  হেডলাইট, ফুয়েল ট্যাঙ্ক, প্যানেলস এবং টেল লাইট ও তীক্ষ্ণ। অপর দিকে হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর মাসকুলার লুক হেডলাইট থেকে টেললাইট পর্যন্ত বিস্তৃত। ঊভয় বাইকের ফুয়েল ট্যাংকে আকর্ষণীয় কার্ভ এর সাথে রয়েছে প্লাস্টিক এর স্কুপ। এটা এসজেড আরআর বাইকে তীক্ষ্ণ দেখায় কিন্ত সিবি ট্রিগারে পেশীবহুল দেখায়। দুটি বাইকেরই ওডো মিটার সম্পূর্ণ আলাদা। এসজেড আরআর এর ওডো এনালগ ডাবল পিট এবং ট্রিগার এর ওডো ফুল ডিজিটাল।

Honda CB Trigger এর লেটেস্ট বিক্রয়মূল্য দেখতে এখানে ক্লিক করুন

honda cb trigger price in bangladesh 2017

ফুয়েল ট্যাঙ্ক এবং ওডো এর পর সবচেয়ে পার্থক্য দেখা যায় হেডলাইট এবং এক্সহস্ট পাইপে। সিবি ট্রিগার এর হেডলাইট বুস্টেড এবং কমপ্যাক্ট, এক্সহস্ট পাইপ বড় । অপর দিকে এসজেড আরআর এর হেড লাইট শার্প এবং এক্সহস্ট পাইপ দেখতে কামানের ব্যারেল এর মত। এসজেড আরআর এর টেল লাইট ডাবল পিস এবং গ্র্যাবরেইল স্প্লিট করা। অন্য দিকে ট্রিগার এর গ্রেব রেইল সিঙ্গেল পিস এবং বাইকটিতে  তিন লেয়ার এর টেললাইট রয়েছে। তবে দুটি বাইকেরই মেটাল চেইনকভার এবং শাড়ি গার্ড রয়েছে।

yamaha vs honda

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - হুইল, ব্রেক এবং সাসপেনশন

চাকা, ব্রেক এবং সাসপেশন এর ক্ষেত্রে দুটি বাইকেরই প্রচুর মিল এবং পার্থক্য  রয়েছে। দুটি বাইক এর চাকা একই রকম ১৭’’ এর রিমের সাথে পাচ স্পোক আর টিউবলেস টায়ার। তবে ট্রীগার এর টায়ার এসজেড আরআর এর চাইতে কিছুটা বেটার ডিজাইনের। ব্রেক এর ক্ষেত্রেও পার্থক্য আছে। এসজে-আরআর এর সামনের ব্রেক হচ্ছে ডিস্ক ব্রেক আর পেছনের ব্রেক হচ্ছে ড্রামব্রেক। কিন্তু ট্রিগার এর দুই ব্রেকই ডিস্ক ব্রেক।  তবে রাইডার চাইলেই ড্রাম ব্রেক এর বাইকও নিতে পারবেন,  সেই অপশনও রাখা হয়েছে। সাসপেশন এর দিকে দেখলে আমরা দেখতে পাই যে সামনের সাপেনশন এর দিক থেকে দুটি বাইকই একইরকম টেলিস্কোপিক ফর্ক সাসপেনশন বিশিষ্ট। কিন্তু রিয়ার সাসপেনশন এর ক্ষেত্রে বাইকদুটো সম্পূর্ণ আলাদা। এসজেড আরআর এ রয়েছে স্প্রিং লোডেড সুইং আর্মবিশিষ্ট ডাবল সাসপেনশন। অপরদিকে, হোণ্ডা সিবি ট্রিগারে মনোশক এবজরভার দেয়া হয়েছে।

yamaha szr vs honda cb trigger review

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - কন্ট্রোলিং

রাইডারের কথা মাথায় রেখে দুটি বাইক এর সিট প্রায় এক রকম ডিজাইনে করা হয়েছে। সিট গুলো একটু স্পোর্টি টাইপ করে বানানো তবে অনেক কমর্ফোটেবল আর আরামদায়ক। এসজেড আরআর এর সিটটা একটু লম্বা, অপর দিকে ট্রিগারের সিটটি  প্রশস্ত। দুটি বাইকেরই হ্যান্ডেল বার একইরকম ডিজাইনের, এবং ফুট রেস্ট এবং লিভার কন্ট্রোল সিস্টেমও ঠিক একই জায়গায়। বাইকদুটোর ওজনও খুবই হিসেব করে মাপ করা যাতে করে বাইকদুটো খুবই স্মুথলি রান করে ও এদের কন্ট্রোলিং সহজ হয়। যদি চালানোর কমফোর্ট বিবেচনা করা হয় তবে দুটি বাইকই আরামদায়ক। তাছাড়া বাইকদুটো সেমি স্পোর্টি হওয়াতে একটা আলাদা অনুভূতি হয়। দুটি বাইকই হাইওয়ে অথবা সিটি - দুই জায়গাতেই সাচ্ছন্দে চালানো সম্ভব। সাসপেনশন এর ক্ষেত্রে দুটি বাইকেরই আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। ডাবল শক এবজরভার বেশি ভার বহন করতে পারে পিলিয়ন সহ। অন্যদিকে মনো শক এবজভার একটু বেশি আরামদায়ক তবে বেশি ভার বহন করতে পারে না। তবে, মনোশক এবজর্ভার সিটি বা হাইওয়েতে কমফোর্ট দেয়। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এর ক্ষেত্রে এসজেড আরআর এর চাইতে হোণ্ডা সিবি ট্রিগার অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

digital meter vs. analogue meter

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - স্পেসিফিকেশন

একটু আগেই বলছিলাম যে দুটি বাইকেরই কিছু মিল আর অমিল রয়েছে। আসুন একটি টেবিলের মাধ্যমে দেখি কি কি পার্থক্য রয়েছে।

স্পেসিফিকেশনইয়ামাহা এসজেড আরএরহোন্ডা সিবি ট্রিগার
ইঞ্জিনসিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক , এয়ার কুলড, টু ভালভসিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক , এয়ার কুলড, টু ভালভ
ডিসপ্লেসমেন্ট১৪৯সিসি১৪৯.১সিসি
বোর*স্ট্রোকনট ফাউণ্ড৫৭.৩মিমি*৫৭.৮মিমি
কম্প্রেশন রেশিওনট ফাউন্ড৯.৫ঃ ১
ম্যাক্সিমাম পাওয়ার১২.১পিস @ ৭,৫০০ আরপিএম১৮.৩৫ বিএইচপি @ ৮,৫০০ আরপিম
ম্যাক্সিমাম টর্ক ১২.৮ এনএম১২.৫ এনএম
ফুয়েল সাপ্লাইকারবুরেটরকারবুরেটর
ইগনিশানসিডিআইসিডিআই
স্টার্টিং মেথডইলেক্ট্রিক এন্ড কিকইলেক্ট্রিক এন্ড কিক
ক্লাচ টাইপওয়েট, মাল্টি- ডিক্সওয়েট, মাল্টি ডিস্ক
লুব্রিকেন্টওয়েট সাম্পওয়েট সাম্প
ট্রান্স মিশনকন্সটান্ট ম্যাস ৫ স্পিডকন্সটান্ট ম্যাস ৫ স্পিড
এয়ার ফিল্টার টাইপপেপার এয়ার ফিল্টারভিসিওয়াস এয়ার ফিল্টার



ফ্রেম টাইপডায়মন্ডডায়মন্ড
ডাইমেনশন (এল*ডব্লু*এইচ)২০৫০মিমি*৭৬০মিমি*১১০০মিমি২০৪৫মিমি*৭৫৭মিমি*১০৬০মিমি
হুইল বেস১৩২০মিমি১৩২৫মিমি
গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স১৬৫মিমি১৭৫মিমি
স্যাডেল হাইট৮০০মিমি৭৬৫মিমি
ক্রেব ওয়েট১৩৪কেজি১৩৫ কেজি
ফুয়েল ক্যাপাসিটি১৪লিটার১২ লিটার



সাসপেশন ফ্রণ্ট/রেয়ারটেলিস্কোপিক ফর্ক/স্প্রিং লোডেড ডাবলটেলিস্কোপিক/মনোশক
ব্রেক সিস্টেম ফ্রন্ট/রেয়ারহাইড্রোলিকডিস্ক/ড্রামবোথ ডিস্ক ব্রেক(ড্রাম অপশনাল)
টায়ার সাইজ ফ্রন্ট/রেয়ার২.৭৫-১৭এম/সি ৪১পি ১০০/৯০-১৭এম/সি ৫৫পি টিউবলেস

৮০/১০০-১৭

১১০/৮০-১৭

টিউবলেস

ব্যাটারি১২ভি ৫.০ এএইচ১২ভি ৮.০ এএইচ
হেড ল্যাম্পহ্যালোজেন বাল্ব ১২ভি ৩৫/৩৫ ওয়াট১২ ভি ৩৫/৩৫ ওয়াট
স্পিডোমিটারএনালগডিজিটাল



yamaha szr vs honda cb trigger performance

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - ইঞ্জিন এবং পারফর্মেন্স

ইঞ্জিন এবং পারফর্মেন্স এর কথা চিন্তা করলে দুটি বাইক প্রায় একই প্লাটফর্ম এ তৈরি। দুটি বাইকেই ১৫০সিসি, ৪ স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার, এয়ার কুলড ইঞ্জিন রয়েছে। ইঞ্জিন এর মধ্যে দুটি ভাল্ভ এবং কার্বুরেটর রয়েছে। কিন্ত মজার কথা হচ্ছে ইয়ামাহা এসজেড আরআর এর বোর, স্ট্রোক  এবং কম্প্রেশন রেশিও প্রকাশ করা হয়নি, তাই এখনো এটি একটি রহস্য। শক্তি আর টর্কের বিচারে বাইকদুটি প্রায় সমপর্যায়ের। এসজেড আরআর ৬,০০০ আরপিএম এর সাথে ১২.৮ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে, এবং ট্রীগার ৬,৫০০ আরপিএম এর সাথে ১২.৫ এনএম টর্ক উৎপন্ন করে থাকে। শক্তি বিচারে টিগার এগিয়ে থাকবে, কারণ যেখানে সিবি ট্রিগার বাইকটি ১৪.৩৫ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করে, এবং অপরদিকে এসজেড আরআর ১২.১ বিএইচপি শক্তি উৎপন্ন করে। এসজেড-আরআর এর চেয়ে সিবি ট্রিগারের ইঞ্জিন বেশি স্মুথ, এবং এর এয়ার ফিল্টার হচ্ছে ভিসিয়াস এয়ার ফিল্টার। এছাড়া বাইকটিতে হোন্ডা ইউনিকর্ন ইঞ্জিনের কিছু ছাপ রয়েছে। অপর দিকে ইয়ামাহা এসজেড-আরআর এর ইঞ্জিন ব্লু কোর টেকনোলজি সমৃদ্ধ। এটি একই সাথে ক্ষমতা, তেল সাশ্রয়ী, এবং পরিবেশবান্ধব। তাছাড়া এর এরোডাইনামিক ডিজাইন সিবি ট্রিগার এর সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভালোই অগ্রাধিকার লাভ করে।

yamaha szrr version 2 features

ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার - উপসংহার

আমরা আপনাদের সুবিধার্থে ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোন্ডা সিবি ট্রিগার এর তুলনামূলক আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদিও দুটি বাইক  নিজ নিজ জায়গা থেকে অনেকটাই আলাদা, তবে বাইকদুটি তাদের সার্মথ্য এবং ফিচার অনুযায়ী নিজেদের অবস্থানে উজ্জল। এছাড়াও আমরা সকলেই জানি যে ইয়ামাহা এবং হোন্ডা - উভয় কোম্পানিই তাদের সার্মথ্য, মান এবং সার্ভিস এর দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছে।

honda cb trigger feature

এটি হলফ করে বলা সম্ভব হচ্ছে না যে কোনটি বেশি ভালো বা কোনটি কেনা উচিত। তবে আপনি যদি একটু স্টাইলিশ এবং স্পোর্টি চান তবে ইয়ামাহা এসজেড আরআর নিতে পারেন। আবার সব দিক বিবেচনা করে হোন্ডা সিবি ট্রিগার নিতে পারেন।  এটা সম্পূর্নই নির্ভর করছে আপনার উপর। আজ এখানেই শেষ করতে হচ্ছে আমাদের আলোচনা। আশা করছি ইয়ামাহা এসজেড আরআর বনাম হোণ্ডা সিবি ট্রিগার - তূলনামূলক রিভিউটি বাইক পছন্দ করার ক্ষেত্রে সকলের কাজে আসবে। আপনার যেকোন মতামত সকলের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

Published by Shuvo Bangla